জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বদলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ছাপাতে চায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের বই অধিদপ্তরের মাধ্যমে ছাপানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের মাধ্যমে বই ছাপানো হলে সরকারের ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তবে, খুদে শিক্ষার্থীদের বই ছাপানোর দায়িত্ব কোন সংস্থা পাচ্ছে তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রাথমিকের বই ছাপানোর বিষয়ে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে, নির্বাচনী বছর হওয়ায় ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বই আগের মতো এনসিটিবির মাধ্যমেই ছাপা হবে। এজন্য এনসিটিবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যেই প্রাথমিকের ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের পাঠ্যবই সব উপজেলায় পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সরকার প্রধানের অনুমোদন মিললে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্ব পাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রাথমিকের বই ছাপানোর বিষয়ে কথা বলেন গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সচিব বলেন, বইয়ের ছাপানোর বরাদ্দ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুকূলে আসে। আইন অনুযায়ী বই ছাপানোর জন্য এনসিটিবিকে অতিরিক্ত ২ শতাংশ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হয়। কাজটা করার সক্ষমতা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রয়েছে। আমাদের বরাদ্দও আছে। কাজটা যদি আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে করতে পারি সরকারের অন্তত ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আমরা আরও দ্রুততার সঙ্গে কাজটি করতে পারবো।
এনসিটিবির (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) আইনে বলা হয়েছে, পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন ও মুদ্রণের কাজ এনসিটিবি করবে। এ বিষয়ে ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছিলাম। সেখানে আমরা বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ পর্যালোচনা করেছি। সুবিধা-অসুবিধা, কোনটা হলে জনগণের ভালো হয়, কোনটা হলে শিক্ষার্থীদের ভালো হয়। সেভাবে আমরা পর্যালোচনা করেছি।
তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে পাঠ্যবই ছাপানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে জানান সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা আগামী বছর কাজ করবো। এ বছর কোনো জটিলতা নেই। যার যা দায়িত্ব তা আমরা পালন করবো। সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবে কাজ করবো।
২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বই ছাপানো নিয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, এ বছর নির্বাচনী বছর। গত বছরের চেয়ে এবার আগাম সতর্কতা অবলম্বন করেছি আমরা। এরই মধ্যে এনসিটিবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে সবাইকে নিয়ে সভা করে কর্মপরিকল্পনা করেছি। এ বছরের বই যেভাবে আছে সেভাবে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী এগোবো। এ বছর আমরা নভেম্বরের মধ্যে যে কোনো মূল্যে সব পাঠ্যপুস্তক উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করবো। এজন্য যা যা করা দরকার কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী তা করা হবে।
প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ কোটি ৯৮ লাখ কপি বই ছাপানো হয়েছিলো। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছিলো চলতি বছরের জন্য। এ পুরো কাজটি হয়েছে এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে।