প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেড পাওয়ার যৌক্তিকতা

মো. সিদ্দিকুর রহমান, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা আশা করেছিলো, তাদের বেতন বৈষম্য দূর হবে। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছেন, অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশের সরকার।

শিক্ষকদের প্রত্যাশা ছিলো, সরকারি সমযোগ্যতাসম্পন্ন অন্যান্য কর্মচারীসহ পিটি পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমকাজ সমযোগ্যতার মতো বেতন স্কেল দশম গ্রেড পাবেন। অথচ তাদের বেতন ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয় ১২তম গ্রেডে। অথচ প্রধান শিক্ষকদের ৩ হাজার ৫০০ টাকা বাড়ানো প্রস্তাব করা হয় ১০ম গ্রেডে। এ বিশাল বৈষম্য কাম্য নয়। এ প্রেক্ষাপটে কিছু বাস্তব উদাহরণ উপস্থাপন করছি : ১. প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের দ্বিতীয় বিভাগ। বেতনের গ্রেড ১৩তম। অন্যদিকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের বেতনের গ্রেড ১০ম। ২. পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের বেতন গ্রেড ১০ম। ৩. নার্সদের নিয়োগ পদে যোগ্যতা এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং) বেতন গ্রেড ১০ম। ৪. উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়োগের যোগ্যতা (চার বছরের কৃষি ডিপ্লোমা) এইচএসসি বেতন গ্রেড ১০ম প্রস্তাবিত। ৫. মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক বা সমমানের বেতন গ্রেড ১০ম ও ৯ম। ৬. এছাড়া একই কারিকুলাম একই পাঠ্যক্রম ও একই ক্লাসের শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষাদান কাজ করা হয়, পিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে, তাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক দ্বিতীয় বিভাগ। বেতন ১০ম গ্রেড। প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে অন্যান্য সমযোগ্যতাসম্পন্ন কর্মচারীদের সঙ্গে বিশাল বৈষম্য। এ বৈষম্যের ফলে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা। ইদানিং সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদের হিসাব দেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকদের সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া উচিত ছিলো। কারণ তাদের ঋণের পরিমাণ ও মাসিক পরিবার পরিজন ভরণপোষণের ঘাটতির দুর্দশার সম্পর্কে জানতে চাইলে, পুরো প্রাথমিকের শিক্ষকদের জীবনযাপনের চিত্র সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা জানতে পারতেন।

শিক্ষার মূল ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিকের শিক্ষকরা সব শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষক। তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তৈরি হয় সমাজের গুণী ব্যক্তিত্ব, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসহ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। অথচ তাদের নিদারুণ কষ্ট দুঃখ ও মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি উপেক্ষিত। সহকারী শিক্ষকরা জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার প্রধান দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিম্নমানের বেতন স্কেলের কারনে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চাচ্ছেনা। দৈব্যক্রমে কেউ আসলেও ভালো বেতনের সুযোগ-সুবিধা পেলে তারা অন্য পেশায় চলে যায়।

মেধাবীরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় অসুস্থ অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রাইমারি শিক্ষায়। দেশ ও জাতির সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে প্রাথমিক সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূর করে ১০ম গ্রেডে দিয়ে মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে। শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে তাদের পেশাগত জীবন সমৃদ্ধ করতে হবে। এর ফলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এর ফলে প্রধান শিক্ষকসহ তৃণমূলের কর্মকর্তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।

সহকারী শিক্ষকদের এই বৈষম্যের আন্দোলন দেশ ও জাতির শিক্ষার সমৃদ্ধি তথা উন্নয়ন সম্পৃক্ত। এর সঙ্গে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের উন্নতি তথা ভাগ্য জড়িত। প্রাথমিক শিক্ষা তথা পরিবারের সমৃদ্ধির স্বার্থে পুরো শিক্ষা পরিবার তথা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রত্যাশা রইলো।

লেখক: শিক্ষাবিদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055239200592041