সব পেশাজীবীদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকরা সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছেন। সর্বস্তরের শিক্ষিত নাগরিকরা প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে শৈশবে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমাজের ভাল অবস্থানেও রয়েছেন। অনেকেই সে স্মৃতি আজও মনে রেখেছেন। তবে যে নেই তাও নয়। কারো কারো কার্যক্রমে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, তারা বাতাসে ভেসে ভেসে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন। প্রতি বছরই প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে সেরাদের জাতীয় পদক দেয়া হচ্ছে।
আমাদের সময় একবার মহাপরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা ড. জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক গ্রহণ করতে হয়েছিলো। তখনকার সে পদকের একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি হিসাবে আমি গর্বিত। পরবর্তীতে জাতীয় প্রাথমিকের পদক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণকালে পদকধারীরা অধিকতর গর্বিত। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় পদকপ্রাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রাথমিকের বেতন বৈষম্যের লিফলেট বিলি করতে গিয়ে ডিজিএফআই এর হাতে গ্রেফতার হয়ে- আমি আজও সেরাদের পদকের চেয়ে বেশি অহংকারবোধ করছি। সে সময় এ গ্রেফতারের জন্য সচিব, মহাপরিচালকসহ সকল কর্মকর্তার মাঝে সহানুভূতিশীল দৃষ্টি বিদ্যমান ছিলো। অথচ আজকে সে দৃষ্টিভঙ্গী দৃশ্যমান নয়।
সে আন্দোলনে সহকারী শিক্ষকদের ননট্রেইন্ড ২৬০০ টাকা স্কেল থেকে ৩০০০ টাকা। সহকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩০০০ টাকা থেকে ৩১০০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষকদের ৩১০০ টাকা থেকে ৩৫০০/- টাকার স্কেলে উন্নীত হয়েছে। তখনকার সময়ে নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ হওয়ায় আমার মন্তব্য ছিলো ‘এ বেতন বৃদ্ধি শুঙ্করের ফাঁকি।’
প্রতি বছর জাতীয় পদক প্রাপ্তি অনুষ্ঠানে সেরারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণ করে। চরম বৈষম্যের মাঝে প্রাথমিকের অবস্থান থাকলেও বছরে একবার হলেও প্রাথমিক শিক্ষকসহ শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্টদের সাথে সহঅবস্থান করে মাননীয় প্রধানন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণে এক অপূর্ব আনন্দের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী কারণে এ বছর জাতীয় পদকপ্রাপ্তি অনুষ্ঠানে আসেননি- বিষয়টি জানা নেই। তবে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ ব্যক্তি মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করা, এটা কম সৌভাগ্যের বিষয় নয়। পদকটি যে কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে পেয়ে থাকুক না কেন, এটি প্রাথমিক শিক্ষার জাতীয় সর্বোচ্চ পদক। এ পদক প্রাথমিক শিক্ষার সেরা অহংকার। পদক পাওয়াটাই বড় অর্জন।
এ বছর পদকপ্রাপ্তদের মাঝে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক না পাওয়ার অনুভূতি থাকাটা স্বাভাবিক। পদকপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানা গেছে, আমরা পদক গ্রহণ করবো না এমন বক্তব্য তারা দেননি। তারা যথাযথভাবে অনুষ্ঠানে পদক গ্রহণ করেছেন।
তবে ফেসবুকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ না করায় মনের কষ্ট তারা ব্যক্ত করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষকসহ সব কর্মচারী শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অপরাধ করলে সরকারি চাকরিবিধি মোতাবেক শাস্তি পাবে, এ বিষয়ে দ্বিমত করার কোনো অবকাশ নেই। তবে চাকরিবিধি ব্যতয় ঘটিয়ে কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রদান কতটুকু বিধিসম্মত? প্রশ্নটা থেকেই যায়।
বিধিবহির্ভূত কার্যকলাপে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আজ অসংখ্য মামলায় জর্জরিত। সেরা ৩ শিক্ষককে বিধির ব্যতয় ঘটিয়ে শিশুশিক্ষায় সাময়িক ক্ষতি করানো কতটা যৌক্তিক ? সব গুণাবলি যাচাই-বাছাই করে সেরা মনোনীত করে পদক দিয়ে শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছি। প্রাথমিকে সকল শাস্তি যেন বিধি মোতাবেক হয়। এ আশাবাদও ব্যক্ত করছি।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষাডটকম