বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজপ্রি-টেস্টে বসতে পারছেন না ৭০ শতাংশ ছাত্রী

বরিশাল প্রতিনিধি |

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার থেকে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে শুরু হচ্ছে দাদশ শ্রেণির প্রাক পরীক্ষা বা প্রি টেস্ট। তবে ফি দিয়েও এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না কলেজটির সাত শতাধিক শিক্ষার্থী। কলেজে অনুপস্থিত থাকায় তাদের পরীক্ষায় বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলেজ প্রশাসন।

এর ফলে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২২৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রি-টেস্ট শুরু করছে সরকারি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে যাদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়া হয়নি তাদেরকে ফিয়ের টাকা ফেরতও দিচ্ছেন না তারা।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে সোমবার সকালে সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষকদের সাথে অভিভাকদের বাকবিতন্ডাও হয়েছে। 

তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব শিক্ষার্থীর কলেজে উপস্থিতির হার ত্রিশ শতাংশের কম কেবল মাত্র তাদেরকেই পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেয়া হয়নি। আর এই সিদ্ধান্ত একদিনের নয়। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে ভর্তির সময় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া বলে জানিয়েছেন সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সালমা বেগম।

সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজে ভর্তির সময় এককালীন সেশন ফিসহ দুই হাজার টাকার বেশি রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৫০ টাকা পর্যন্ত প্রি-টেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষার ফি।

তারা বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি সরকারি মহিলা কলেজে প্রি-টেস্ট শুরু হচ্ছে। এজন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীর পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে দাদশ শ্রেণিতে ৯৪৬ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সেখানে প্রি-টেস্টে বসার অনুমতি দেয়া হয়েছে মাত্র ২২৫ জনকে।

অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের মৌখিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী বছরে শতকরা ৩০ শতাংশ উপস্থিতি রয়েছে কেবলমাত্র তাদেরকেই পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেয়া হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে।

তারা বলেন, বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে টেস্ট বা প্রি-টেস্টের জন্য আলাদাভাবে ফি নেয়া যাবে না। কিন্তু সরকারি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রি-টেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষাবাবদ এককালীন সর্বনিম্ন ৬৫০ টাকা করে আদায় করে নিয়েছে। এখন পরীক্ষায় বসার অনুমতিও দিচ্ছে না, আবার ফিয়ের টাকাও ফেরতও দিচ্ছে না। এটা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা বলে অভিযোগ তাদের।

এ প্রসঙ্গে সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক সালমা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। এজন্য তারা কলেজের শিক্ষক এমনকি নিজেদের ডিপার্টমোটের ভবন কোনটা তাও তারা চেনে না। যেটা লজ্জাজনক।

তিনি বলেন, ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে ভর্তির সময় নির্দেশনা দেয়া ছিল যাদের কলেজে শতকরা ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকবে তারাই কেবল প্রি-টেস্ট এবং টেস্ট পরীক্ষায় বসতে পারবে। কলেজ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিয়ে আগে অভিভাবকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংও করেছি আমরা।

উপাধ্যক্ষ বলেন, ৭৫ শতাংশ উপস্থিতির কথা থাকলেও এখন তা কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সোমবার পর্যন্ত ২২৫ জনকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রবেশপত্র দেয়া হয়েছে। যাদের মধ্যে বিশেষ বিবেচনায় কয়েকজনকে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর থেকে বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রি-টেস্টের সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি তাদের টেস্ট পরীক্ষার অনুমতির বিষয়টি নিয়েও নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না পাওয়া শিক্ষার্থী ফি ফিরিয়ে দেয়া হবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে উপাধ্যক্ষ বলেন, আমাদের কলেজে অত্যাবশ্যকীয় কর্মচারী রয়েছে। তাদেরকে বেতন দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা নেয়া হচ্ছে সেটা দিয়েই তাদের বেতন দেয়া হচ্ছে। আর এটা নেয়ার নিয়ম আছে। এখন কাগজপত্রের দামও বেশি। তার ওপর অনেক শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত সেশন ফিও দেয়নি। তার পরেও আমরা বিষয়টি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবো।

জানতে চাইলে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. লিয়াকত হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির ওপর পরীক্ষায় বসতে দেয়া না দেয়ার এখতিয়ার কলেজ প্রশাসনের আছে। এখানে বোর্ডের কিছু করার নেই। তাছাড়া ফি ফেরত দেয়া না দেয়াও তাদের এখতিয়ার। তবে টেস্ট বা প্রি টেস্টের ফি না নেয়ার জন্য বোর্ডের যে নির্দেশনা ইতিপূর্বে দেয়া হয়েছে তা এখনো বহাল রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে থাকলে সে বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে সেজন্য শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026760101318359