গভীর রাতে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ইলিয়াস হোসেন (১৯) নামে এক কলেজছাত্র নিহতের অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের দাবি, মেয়েপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেমিকা লুইস পারভীন লিয়াকে (১৮) হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তার দাবি, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের দফাদারপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে।
এলাকাবাসী, নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের দফাদারপাড়ার ফারুক হোসেনের ছেলে ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে প্রতিবেশী আয়নাল হকের মেয়ে লিয়ার তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। মেয়ের পরিবারের লোকজন বিষয়টি মেনে নিচ্ছিলেন না। শনিবার রাত ৩টার দিকে আকস্মিক লিয়া কল করে ইলিয়াসের আত্মহত্যার খবর তার মামাতো ভাই ইয়াসিনকে জানান। কল পেয়ে ইয়াসিন (দশম শ্রেণির ছাত্র) ও তার এক বন্ধু লিয়ার বাড়ির জানালার পাশে গিয়ে ইয়াসিনের লাশ দেখতে পায়। তবে সে মৃতের গলায় দড়ি বা কোনও কাপড় দেখেনি। এরপর বাড়িতে গিয়ে নিহতের বাবা-মাকে মৃত্যুর খবর জানায়।
নিহতের চাচা প্রবাসী মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা সেই সময় ছেলেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনি। তাকে ইতালি পাঠানোর জন্যে চেষ্টা করছি। আগামী মাসের ৫ তারিখে তার ভিসা আসার কথা। বর্তমানে আমাদের অবস্থা একটু ভালোর দিকে হওয়ায় আয়নালের বউ তার মেয়েকে ফের ছেলের পিছে লেলিয়ে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।[inside-ad-
তার দাবি, আমরা ইলিয়াসের নাকে ও ঘাড়ের পাশে রক্তাক্ত জখম দেখেছি। আয়নাল, তার স্ত্রী ও মেয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইপোকে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
নিহতের মামাতো ভাই ইয়াসিন দাবি করে, রাত ৩টা ১৪ মিনিটে লিয়া আমাকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে জানান- তোমার ভাই আমাদের বাড়ির পাশে আত্মহত্যা করেছে। তিনবার কল দেওয়ার পর আমি টের পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ওই সময় সঙ্গে আমার এক বন্ধুও ছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, ভাইয়ের মাথার কাছে বসে লিয়া কান্না করছে। কিন্তু ভাইয়ের গলায় কোনও কাপড় বা দড়ি ছিল না।
নিহতের বাবা ফারুক হোসেনের দাবি, আয়নাল ও তার পরিবারের সদস্যরা তার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।
এদিকে, লুইস পারভীন লিয়া সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, পরিবারের লোকজনের সম্মতি না থাকায় সম্প্রতি তিনি ইলিয়াসের সঙ্গে ব্রেকআপ করেন। গত রাতে ইলিয়াস তাদের বাড়ির জানালায় যান। সেখানে গিয়ে বলতে থাকেন, তাকে (লিয়া) ছাড়া বাঁচবেন না। একপর্যায়ে লিয়ার গলা থেকে ওড়না টেনে নিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
ঘটনাস্থলে থাকা গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, সকালে মৃত্যুর বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে এসেছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে শুনেছি, তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমি লাশ দেখেছি। লোকজন বলছে, এটি পরিষ্কার খুন। যদি খুনের ঘটনা ঘটে থাকে, অবশ্যই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন যশোরের ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত। তিনি জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েটিকে থানায় নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নিহত ইলিয়াস হোসেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল আমজামতলা মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। লিয়া স্থানীয় গঙ্গানন্দপুর কলেজে একই ক্লাসে পড়াশোনা করেন।