পড়া না পারলেই গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেন মাদরাসা শিক্ষক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি |

কুষ্টিয়ার খোকসায় একটি নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রদের নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কথার অবাধ্য হলেই গরম রডের ছ্যাঁকা দেওয়া এখানকার নিয়মিত ঘটনা। সম্প্রতি এমন এক ঘটনায় এক ছাত্রকে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেওয়ার বিষয়টি তিন হাজার টাকায় আপসরফা হয়েছে।

উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া নূরানি হাফিজিয়া কওমি মাদ্রাসায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৯০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।

মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২ জুলাই ছিল শুক্রবার, মাদ্রাসা বন্ধের দিন। তবু পড়া করে দিতে হয়। পড়া না করায় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মুছার পেটে গরম ইস্ত্রির ছ্যাঁকা দেন শিক্ষক হাফেজ মামুনুর মামুন। মুছা শিমুলিয়া পালপাড়ার আনিসুলের ছেলে। শিশুটি এখনও পোড়ার ক্ষত নিয়ে অসুস্থ বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় শিশুটির অভিভাবকরা তৎপর হন। ৫ জুলাই স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজের মাধ্যমে তিন হাজার টাকায় ঘটনার আপসরফা হয়।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

শিক্ষার্থীদের আরও অভিযোগ, একই শিক্ষক নূরানি শ্রেণির শিশুশিক্ষার্থী হাসানের কানে গরম রড দিয়ে ছ্যাঁকা দেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ইব্রাহীমকে গরম রড দিয়ে গলায় ছ্যাঁকা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় ইব্রাহীম নিজেকে রক্ষা করতে গেলে তার বাম হাত পুড়ে যায়।

অভিযোগ পেয়ে ১৬ জুলাই এই প্রতিবেদক মাদ্রাসায় যান। তখন শিশুরা নির্যাতনের ভয়াবহ কাহিনি শোনায়। নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ইব্রাহীম জানায়, পড়া না পারায় হাফেজ মামুনুর তার কাঁধে গরম রড চেপে ধরার চেষ্টা করেন। তখন নিজেকে রক্ষা করতে গেলে তার হাত পুড়ে যায়। শিশুটির মা রূপসী বলেন, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তিনি ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। কিন্তু মাদ্রাসায় শিক্ষকের নির্যাতনে ভয়ে তার ছেলে রাতে আঁতকে ওঠে।

কথা হয়, ভুক্তভোগী শিশু শিক্ষার্থী হাসানের সঙ্গে। সে জানায়, শিক্ষকের নির্যাতনের কথা সে ভয়ে প্রথমে বাবাকে জানায়নি।

এসব অভিযোগে শিক্ষক মামুনুরকে ১৩ জুলাই মাদ্রাসা থেকে মৌখিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নূরানি হাফিজিয়া কওমি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান। এরপর মামুনুর নিজের বাড়ি ঝিনাইদহে চলে গেছেন। তার ঠিকানা বা ফোন নম্বর প্রধান শিক্ষক দিতে না পারায় শিক্ষক মামুনুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

টাকার বিনিময়ে নির্যাতনের ঘটনা আপসের কথা অস্বীকার করে শিমুলিয়া ইউনিয়নের সদস্য সিরাজ দাবি করেন, ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় আপসের বিষয়ে তিনি জানেন না। এমনকি মাদ্রাসাটি কারা চালান, তাও তিনি জানেন না।

তবে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে তিন হাজার টাকায় ছাত্রটির পরিবারের সঙ্গে আপস করা হয়েছে।

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শিক্ষক মামুনুরকে ঘটনার পরপরই বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব মাদ্রাসায় নিয়োগ হয় মৌখিক। অপরাধের প্রমাণ পাওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই হাফেজ মামুনুরকে বিদায় করে দিয়েছেন। তা ছাড়া শিক্ষার্থীর পেটে গরম ইস্ত্রি চেপে ধরার বিষয়টি ইউপি সদস্যের মাধ্যমে আপস করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053308010101318