ফলাফল ঘোষণা না করে পালাল শিক্ষক নিয়োগ কমিটি!

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

পঞ্চগড়ের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরিপ্রার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা না করেই পালিয়ে গেছেন নিয়োগ কমিটির সদস্যরা। ফলাফল ঘোষণা না করায় বিক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থী ও তাদের স্বজনরা নিয়োগ কমিটির সদস্যদের অবরুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে কৌশলে এক এক করে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যান নিয়োগ কমিটির সদস্যরা। গত সোমবার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহানহাট ইউনিয়নের বোয়ালমারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, নিয়োগ জালিয়াতি ও স্বজনপ্রীতি করে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির ভাতিজা ও প্রধান শিক্ষকের বোনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অন্য চাকরিপ্রার্থীসহ তাদের স্বজনরা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

জানা গেছে, বোয়ালমারী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে চার, অফিস সহায়ক পদে সাত এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে পাঁচজন প্রার্থী আবেদন করেন।

চাকরিপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করে বলেন, সোমবার বিকেলে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনসহ দুই সহকারী শিক্ষক এবং তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কথায় সাজানো পরীক্ষা গ্রহণ করেন। পরে ফলাফল না টানিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রথমে নিয়োগ কমিটির সদস্যরা এবং পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক কৌশলে একে একে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে তার আপন বোন জেবুন বেগমকে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আকবর আলী তার আপন ভাতিজা ইমরান খানকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া পরিছন্নতাকর্মী পদে আরজু বেগম নামে এক নারীকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার আগেই এসব পদে তারাই নিয়োগ পাবেন বলে এলাকায় আলোচনা ছিল।

অফিস সহায়ক পদের পরীক্ষার্থী নির্মল চন্দ্র, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদের পরীক্ষার্থী হুসনেয়ারা ও ফরহাদ হোসেন বলেন, টাকার বিনিময়ে তারা তাদের (বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ) নিজেদের লোককে নিয়োগ দেবে, এটা আগেই শুনেছেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছিল লোক দেখানো। টাকা নিয়েছে বলেই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা বা টানিয়ে না দিয়ে সবাই পালিয়ে গেছেন।

তারা আরও বলেন, ১৯ মার্চ এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। চাকরিপ্রার্থীরা বিদ্যালয়ে দিনভর থেকে ফিরে যান। সেদিন পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমীন বলেন, ‘এই নিয়োগ নিয়ে কিছুদিন ধরে টালবাহানা চলছিল। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষার কোনোটাতেই স্বচ্ছতা ছিল না।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি জাকির হোসেন বলেন, ‘ফলাফল ঘোষণার দায়িত্ব হচ্ছে বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি আকবর আলী এবং প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার। আমরা ফলাফল প্রকাশ করিনি, তবে ফলাফল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির হাতে দিয়ে এসেছি।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী বলেন, ‘নিয়োগ কমিটির সদস্যরা পালিয়ে যাননি। নিয়োগ পরীক্ষা সঠিকভাবে, নিয়ম মেনে নেওয়া হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের।’

এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম ও সভাপতি আকবর আলী বিতর্কিত এই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বোন-ভাতিজার নিয়োগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল টানানো হয়নি বা ঘোষণা করা হয়নি। তবে পরে রাতে ফলাফল টানানো হয়। যেহেতু নিজস্ব লোক নেওয়া হয়েছে, তাই কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি বলেও দাবি করেন তারা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মোবাইল ফোনে কল করে চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। তবে আমি লিখিত অভিযোগ পাইনি। নিয়োগসংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করতে পারে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032351016998291