ফাজিল পাস ইয়াবা মামলার আসামিকে কোরআন পড়তে বললেন আদালত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মাদরাসা থেকে ফাজিল পাস করা পাঁচ পিচ ইয়াবা মামলার আসামিকে পবিত্র আল কোরআনের সূরা বাকারা, মায়েদা এবং সুরা নিছা ভাল করে পড়তে, ৫০টি গাছ লাগাতে এবং মাদরাসায় ভালমানের কিছু ধর্মীয় বই উপহার দিতে বললেন আদালত। গতকাল রোববার  ইয়াবা মামলার আপীল শুনানি শেষে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম এ মামলার সাজা স্থগিত করে এ আদেশ দেন। ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বিপুল চন্দ্র দেবনাথ এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আসামির নাম মো. ইয়াকুব আজাদ। তিনি নোয়াখালি জেলার চাটখিল থানার পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের শামছুল আলমের ছেলে।

রায়ের বিবরণ হতে জানা যায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৩ নভেম্বর শাহবাগ থানাধীন হোটেল আপ্যায়নের পূর্বপাশ থেকে মো. ইয়াকুব আজাদকে পাঁচ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয় মর্মে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী হাবিবুর রহমান এ মামলা দায়ের করেন। ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর এসএম এলতাস উদ্দিন ইয়াকুবকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। চার্জগঠন থেকে মামলার বিচার চলাকালে আসামি পলাতক ছিলেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই ঢাকার মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রাশেদ তালুকদার আসামিকে ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। রায় ঘোষণার আগে চার্জশিটভুক্ত ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ তিনজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। রায়ের পর আসামি পরোয়ানা মূলে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন এবং ২ নভেম্বর তিনি জামিন পেয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল দায়ের করেন। গতকাল রোববার আপিল শুনানির জন্য আদালতে দিন ধার্য্য ছিলো। এদিন আইনজীবী জায়েদুর রহমানের মাধ্যমে আসামি প্রবেশন আইন অনুযায়ী দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থণা করেন।

শুনানিকালে কাঠগড়ায় থাকা আসামিকে বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, আপনার ছেলেমেয়ে আছে? জবাবে আসামি জানান, এক ছেলে মাদরাসায় হাফেজী পড়ে, আর এক মেয়ে ছোট। তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ঘর পবিত্র করার জন্য ছেলেকে হাফেজী পড়াচ্ছেন, সে আপনার জন্য দোয়া করবে, মরে গেলে জানাজা পড়াবে, আপনি কিনা ইয়াবা মামলার আসামি! এরপর বিচারক বলেন, আপনি কি পড়ালেখা করেছেন? তখন আসামি বলেন, আমি মাদরাসা থেকে ফাজিল পাস করেছি।

এরপর বিচারক কলেন, ছেলে মাদরাসায় হাফেজী পড়ে, আপনি মাদরাসা থেকে ফাজিল পাস। আপনি কেন ইয়াবার মামলার আসামি হলেন? তখন আসামি বলেন, স্যার আমাকে ইয়াবা দিয়ে মামলা দিয়েছে। এরপর বিচারক বলেন, পবিত্র কোরআনের কোন সুরায় মাদক সম্পর্কে বলা আছে জানেন। সূরা বাকারা, মায়েদা ও নেছা ভালো করে পড়বেন। এর মধ্যে পাবেন মাদক সম্পর্কে বলা কথা।

এরপর বিচারক বলেন, আর আপনার সাজা স্থগিত করা হলো। আর প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধায়নে থেকে আপনি ৫০টি গাছ লাগাবেন, পবিত্র আল কোরআনের সূরা বাকারা, মায়েদা এবং নিসা ভালো করে পড়বেন এবং আপনার ছেলে যে মাদরাসায় পড়ে সে মাদরাসায় ভালোমানের কিছু বই উপহার দিবেন। এমন বই দিয়েন না, যে বই পড়ে না আবার মানুষ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003777027130127