ফি চায় করপোরেশন : মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় স্থবির জন্মসনদের কার্যক্রম

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

জন্ম ও মৃত্যুসনদের ফি কার কোষাগারে জমা হবে, সেই ‘বিবাদের’ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব সনদের কাজ মূলত সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদই করে থাকে। ফলে ফি তাদের কোষাগারেই জমা যাওয়া উচিত বলে মনে করেন কেউ কেউ; কিন্তু যাচ্ছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে। এ অবস্থায় ফি নিজেদের কাছে রাখার দাবি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তহীনতায় জন্ম ও মৃত্যুসনদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

বিধিমালা হওয়ার আগে এই ফি সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার নিজস্ব তহবিলেই জমা হতো। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, এই ফি সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। তবে কাজ করবে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাই। সরকারের এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের সব সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্টের নির্বাহী কর্মকর্তা, মেহেরপুর পৌরসভা এবং দুটি ইউনিয়নকে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি করপোরেশন। তারা মনে করে, এই টাকা পাওয়ার অধিকার একমাত্র সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোর। কারণ তাদের জনবল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ এই সেবা সংস্থাগুলো থেকেই হয়ে থাকে।

মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তহীনতায় মাশুল গুনছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। প্রতিনিয়ত সেবা নিতে গিয়ে হাজার হাজার সেবাপ্রত্যাশী ফিরে যাচ্ছেন। এ সিদ্ধান্তহীনতায় অসহায় সিটি করপোরেশন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জটিলতার বিষয়টি নিয়ে গত মাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেখানে মন্ত্রী একজন অতিরিক্ত সচিবকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য নির্দেশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো সমাধান আসেনি। তাই জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।

লুৎফর রহমান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার বাচ্চার পাসপোর্ট করাতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। পাসপোর্ট করাতে গেলে আগে জন্মনিবন্ধন সনদ লাগবে। তিন মাস ধরে সিটি করপোরেশনে ঘুরছি, কেউ সঠিক সমাধান দিতে পারছে না। কবে সমাধান হবে, তাও বলতে পারছে না। এ রকম তো হতে পারে না। শুধু আমার নয়, এ রকম হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। শুধু পাসপোর্ট নয়, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভূমিসংক্রান্ত কাজ, বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তিÑ সব কাজেই জন্মসনদ বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তহীনতায় স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো কাজটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রমে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এ সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আপত্তি জানিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাবদ ফি জমা হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। 

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন খাতে আদায়কৃত ফি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমাদানের জন্য ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে নোটিশ ইস্যু করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়Ñ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বিধিমালা ২০১৮-এর ২১ (৬) বিধি অনুযায়ী ফিস বাবদ আদায়কৃত অর্থ পরবর্তী মাসের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারি তহবিলে জমা করতে হবে। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থ সরকারি তহবিলে জমাদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন অর্থনৈতিক কোড নির্ধারণ করা হয়েছে।

এরপর থেকেই জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম কার্যত বন্ধ রয়েছে। অনেক সিটি করপোরেশন সীমিত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। পাসপোর্টের মতো জরুরি সেবা নিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া ভূমি ক্রয়-বিক্রয়সহ নানা কাজে ব্যাঘাত ঘটছে এই জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভিসটা তো আমরা দিচ্ছি। অবশ্যই ফি সিটি করপোরেশনের কাছেই থাকা উচিত। তারা যদি নিতে চায় তা হলে কাজটাও তারাই করুক। আমাদের কাগজ, জনবল ও অন্যান্য খরচ হচ্ছেÑ তাই ফিও দিতে হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস  বলেন, ‘আমরা মনে করি জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কাজটি যেহেতু সিটি করপোরেশন করে, তাই রাজস্বটা সিটি করপোরেশনের খাতেই থাকা উচিত। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখেছি। কিন্তু কোনো জবাব পাইনি।’

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতিতে সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এজন্য দ্রুত বিষয়টির সমাধান হওয়া উচিত।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘করপোরেশনের আয় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। তা ছাড়া জন্মনিবন্ধনের কাজটি করতে করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেক সময় দিতে হয়। এই কাজটি যেহেতু সিটি করপোরেশন করে, তাই ফি বাবদ রাজস্বটা সিটি করপোরেশনের খাতেই থাকা উচিত বলে মনে করি।’

রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত সচিব) মো. রাশেদুল হাসান বলেন, ‘এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকার যেটা করবে সেটাই হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025928020477295