ফি দিতে না পারা শিক্ষার্থীকে ক্লাসে আসতে নিষেধ করেছে মনিপুর স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার কারণে দ্বাদশ শ্রেণির ভর্তি ফিয়ের সাড়ে সাত হাজার টাকা দিতে না পারা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে নিষেধ করেছে রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। বেতন ভাতা ও  দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ফি দিতে না পারা এক শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ অভিযোগ করেছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে তাকে ক্লাসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। 

যদিও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি দিতে উদ্বুদ্ধ করতে এমনটা বলা হয়েছে। তবে, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসলে তাদের ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেছেন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম।

প্রতিষ্ঠানটির দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে আমি একাদশ শ্রেণিতে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ভর্তি হই। ভর্তির সময় আমাদের থেকে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাস থেকে সেশন ফি আদায় করা হয়। পরবর্তীতে করোনা মহামারির কারণে অনেকের মতো আমাদেরও অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমরা কয়েক মাসের সেশন ফি দিতে পারিনি। কলেজ থেকে কয়েক মাস আগে বলা হয়েছিল ধীরে ধীরে সেশন ফি গুলো দিয়ে দিতে। আমি গত আগস্ট মাসে তিন মাসের সেশন ফি দেই। এরপরও আমার সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১০ মাসের সেশন ফি বকেয়া ছিল। 

ওই ছাত্রী আরও জানান, সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে কলেজ খোলার ঘোষণা আসার পর কলেজ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়, ১২ সেপ্টেম্বরের কলেজ খোলার প্রথম দিনই একাদশ শ্রেণির শেষ ক্লাস এবং ১৩ তারিখ থেকে তোমরা দ্বাদশে উন্নীত হবে। এজন্য সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখের আগে সমস্ত বকেয়া সেশন ফি পরিশোধ করতে বলা হয় এবং দ্বাদশের ভর্তি ফি বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে বলা হয়। এই নোটিশের পর আমি আমার আম্মুকে নিয়ে কলেজে যোগাযোগ করি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, যতদিন টাকা দিতে পারবে না ততদিন ক্লাস ও করতে পারবে না।

ওই ছাত্রী আরও বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর আমি আরও সাত মাসের সেশন ফি পরিশোধ করি। এ দিনই ক্লাসটিচার ম্যাডাম ক্লাস থেকে যারা সেশন ফি ও ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে ডেকে নিয়ে যান। তখন আলাদা করে আমাদেরকে বলা হয় তোমরা কাল থেকে আর ক্লাস করতে পারবে না। ২০ তারিখে রাতে আমার অভিভাবক ম্যাডামকে টেলিফোন করে বলেন, বাকি তিন মাসের বকেয়া বেতন এই সপ্তাহে পরিশোধ করে দেওয়া হবে। তখন শুধু ভর্তি ফিয়ের সাড়ে ৭ হাজার টাকা বকেয়া থাকে। দ্বাদশে ভর্তির টাকাটা এ মাসের মধ্যেই আমরা পরিশোধ করব। এসব জানালে ম্যাডাম বলেন এখানে আমার কিছু করার নেই। তিনি আরও জানান, সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করে মেয়েকে কলেজে পাঠাবেন না। যদি কলেজে পাঠান আর কর্তৃপক্ষ ক্লাস রুম থেকে বের করে দেয় তখন বিষয়টা খারাপ দেখাবে। ম্যাডাম নিষেধ করায় আমি ২১ তারিখ থেকে আর কলেজে যেতে পারিনি। আমি আমার অন্যান্য বান্ধবীর সাথেও যোগাযোগ করেছি যাদের বকেয়া আছে, তারাও কেউ কলেজে ক্লাস করতে পারেনি।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের শিক্ষকরা সহকারী প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। 

সহকারী প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফিয়ের টাকা আদায় করতে এমনটা হয়তো শিক্ষকরা বলেছেন। আমার ফি না পেলে প্রতিষ্ঠান চলাবো কিভাবে। তবে, কোন ছাত্রী ক্লাসে আসলে তাকে ক্লাস করতে দেওয়া হচ্ছে। আমরা কাউকে বের করে দিচ্ছি না। 

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানান, কোনো শিক্ষার্থী যদি একান্ত অর্থনৈতিক জটিলতায় পড়ে ভর্তি ফি দিতে না পারে তার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জানা গেছে, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকরা একসময় এমপিও বাবদ সরকারের দেওয়া বেতন ভাতা পেতেন। কিন্তু এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা সরকারি বেতনভাতা উত্তোলন বন্ধ করে দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050539970397949