শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ফেসবুক ব্যবহার কমিয়ে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ফেসবুকে বেশি সময় কাটানো। এটা শুধু বাংলাদেশের চিত্র না, পৃথিবীর বেশির ভাগ জায়গায় এখন এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য ফেসবুকমুখী না হয়ে বইমুখী হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (১০ অক্টোবর) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় করছে। এটা শুধু বাংলাদেশে না, পুরো পৃথিবীর একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের ফেসবুকে কম সময় দিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুম থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে বেশি শিখতে পারে শ্রেণি কক্ষের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের জীবনে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন শিক্ষার্থীরা। আবার সে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথও খুঁজে বের করেন।
‘এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সহশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড থেকে বেশি শিখতে পারেন আমাদের শিক্ষার্থীরা। এ শিক্ষার মাধ্যম শিক্ষার্থীরা একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠেন’- বলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কিছু শিক্ষক ঠিক করে পড়ায় না এবং শিক্ষকদের মাঝে ইন্টার্নাল পলিটিক্স আছে এই জিনিসটা আমি জানি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে এগুলোর বিরুদ্ধে আজীবন ফাইট করেছি। যাতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বান্ধব হয়। এগুলো থাকবে, এজন্য শিক্ষার্থীরা হাল ছেড়ে দিবে, এটা ঠিক না।
দুই বছর পর নিজ কর্মস্থল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ঘটনায় করা মামলার সাক্ষ্য দিতে বুধবার সিলেটে আসেন তিনি।
মামলায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি পুলিশ খুব ভালোভাবে দেখছে, যেন কোনো ধরনের ফাঁকফোকর না থাকে। এ জন্য সময়ও একটু বেশি লাগছে। আমার জানা মতে, হলি আর্টিজান ঘটনার মামলার সাক্ষী ৫৪ জন। আমার মামলার সাক্ষী ৬০ জন।’
অবসর নেওয়ার প্রায় দুই বছর পর শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। এত দিন পর ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় এই অধ্যাপককে পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। অনেক শিক্ষার্থীকে এ সময় তার সঙ্গে সেলফি তুলতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৬ জন অভিযুক্ত হলেন- ফয়জুল হাসান ফয়েজ, ফয়েজের বন্ধু মো. সোহাগ মিয়া, ফয়েজের পিতা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান, মাতা মোছাম্মৎ মিনারা বেগম, মামা মো. ফজলুর রহমান এবং ফয়েজের ভাই এনামুল হাসান।