ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কতিপয় শিক্ষকের বেয়াড়াপনায় লাগাম টানতে ফের কঠোর বার্তা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ফেসবুক ব্যবহারে শিক্ষকদের সতর্ক করে গত বছরের অক্টোবরে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আট দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। সেসব নির্দেশনা দিয়ে জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি ফের প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই নির্দেশনায় সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন পোস্ট, জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন পোস্ট বা ছবি, অসত্য, অশ্লীল ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে কোনো পোস্ট দেয়া বা ছবি শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে সব শিক্ষকদের। তা না হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
গত বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে নির্দেশনাটি প্রকাশ করা হয়। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞাপ্তিটি জারি করা হয়েছিলো। তখন বিজ্ঞপ্তিটি সব সরকারি ও বেসরকারি স্কুল কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকদের পাঠিয়েছিলো অধিদপ্তর।
মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, মন্তব্য, লাইক ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
এছাড়া কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন বা ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি পরিপন্থী কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, মন্তব্য, লাইক, শেয়ার করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সার্ভিসকে হেয়প্রতিপন্ন করে, এমন কোনো পোস্ট দেয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। লিঙ্গবৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো তথ্য-উপাত্তও প্রচার করা যাবে না।
জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে, এমন বিষয়ে লেখা, অডিও বা ভিডিও প্রকাশ বা শেয়ার করা যাবে না। ভিত্তিহীন, অসত্য বা অশ্লীল তথ্য প্রচার থেকেও বিরত থাকতে হবে। অন্য কোনো রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য সম্বলিত কোনো পোস্ট, ছবি, অডিও বা ভিডিও আপলোড, মন্তব্য, লাইক, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
জানা গেছে, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকার’ আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এসব নির্দেশনা দিয়েছে। সরকারি বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের এ নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। অধিদপ্তর বলেছে, তা না হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অধিদপ্তর আরো বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ‘কন্টেন্ট’ ও ‘ফ্রেন্ড’ সিলেকশনে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন এবং অপ্রয়োজনীয় ট্যাগ, রেফারেন্স বা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বা নিজ অ্যাকাউন্টের ক্ষতিকারক কন্টেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী হবেন এবং সে জন্য প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিজ্ঞাপ্তি অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে সহকর্মী, প্রতিষ্ঠান প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্টাচার বহির্ভূত ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা- ২০১৮, সরকারি চাকুরি আইন- ২০১৮, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকগণের চাকরি শর্ত বিধিমালা ১৯৭৯ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১১ (পরিমার্জিত সংস্করণ)' এর পরিপন্থী। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যেসব শিক্ষক-কর্মচারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ খুলেছেন, সেসব গ্রুপের সব গ্রুপ অ্যাডমিনকে গ্রুপে কন্টেন্ট বা পোস্ট অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারি আইন ও বিধি প্রতিপালনের নির্দেশনা দেয়া হলো। এ নির্দেশনাটি সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিয়মিত মনিটরিং করবেন। কোন শিক্ষক-কর্মচারী বা কোনো ব্যক্তি কারো কন্টেন্ট বা পোস্টে সংক্ষুব্ধ হলে ওই কন্টেন্ট বা পোস্ট আপলোডকারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রমাণকসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর আবেদন করবেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব (লিংক যাবে) করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।