মাসব্যাপী মেলায় শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে অনুয়ায়ী শুক্রবার ছিলো শিশুপ্রহর। প্রহর শুরুর পরপরই শিশুদের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ অনাবিল আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে। কচি-কাঁচা শিশুরা মা- বাবার হাত ধরে মেলায় এসে মেতেছে এক অন্যরকম আনন্দে। এই দিনটি মাসের শেষ শুক্রবার হওয়ায় শিশুপ্রহর ঘিরে ভিড়ও ছিলো কিছুটা বেশি।
গল্পের, ছড়ার বা কমিকসের বই কেনাকাটা ছাড়াও সিসিমপুরে মঞ্চে নাচানাচি, গান, চিত্রাঙ্কন ও আবৃত্তি প্রযোগিতায় অংশ নিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার ছিলো মেলার ২৩তম দিন।
মেলায় মায়ের হাত ধরে শিশুপ্রহরে আসা রাজশাহীর শিশু মিথিয়ার চোখেমুখে ছিলো আগ্রহ আর বিস্ময়। তার মাথায় কেবল ঘুরছে, নিজের শহরে ফিরে গিয়ে বন্ধুদের কাছে কখন মেলার গল্প বলবে।
এদিন সকাল থেকে দুপুরের কিছু সময় একুশের বইমেলা নির্ধারিত ছিলো মিথায়ার মতো শিশুদের জন্যই। এই প্রহরে অভিভাবকদের হাত ধরে তারা ঘুরে বেড়ায় বইয়ের স্টলে স্টলে। নিজেদের বা বাবা-মায়ের পছন্দমত বই কেনে শিশুরা।
চার বছরের মিথিয়াকে কোলে নিয়ে তার মা সুরাইয়া আনজুম জানালেন, তারও এবার প্রথম মেলায় আসা। গত বৃহস্পতিবার রাত আর গতকাল শুক্রবার সকালে হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি থেকে হালকা বৃষ্টি। তাই এদিন মেলার মাঠে ধুলা না থাকলেও কোথাও কোথাও কাদা আর জমে থাকা পানির জন্য বাচ্চাদের নিয়ে সাবধানে চলাফেরা করতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। এতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মেলায় আসা দর্শানার্থীদের। কেউ কেউ বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন প্রাবন্ধিক-গবেষক মানবর্দ্ধন পাল, সঙ্গে মেয়ে এষনা পাল এবং দুই নাতি মেঘ ও রোদ। মেয়ে ও নাতিদের নিয়ে শিশুচত্বরে ঘুরছিলেন তিনি।
মানবর্দ্ধন পাল বলেন, আজ নিয়ে তিনদিন এলাম। বইমেলায় আসা মানেই তো অন্যরকম আনন্দের। বাংলার বিপ্লবী চরিতাভিধান নামে তার একটি নতুন বই কথাপ্রকাশ প্রকাশনী থেকে এসেছে বলেও জানান মানবর্দ্ধন পাল।
তিনি বলেন, সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত বাংলার বিপ্লবীদের নিয়ে মূলত এই বইটি। এই বইয়ে দেড় হাজার বিপ্লবীর তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে দশটায় বইমেলার মূলমঞ্চে ছিলো বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসা আনিকা তাবাসসুম বলেন, সকালে আবৃত্তি প্রতিযোগিতার পুরস্কার অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। পরে মেলায় মেয়েকে নিয়ে ঘুরেছি, বই কিনেছি।
বইমেলায় শিশুদের আনন্দকে রাঙিয়ে দিতে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার সিসিমপুর মঞ্চে থাকে সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র ইকরি, হালুম, টুকটুকি, শিকু, জুলিয়ারা। টিভি পর্দার এই জনপ্রিয় চরিত্ররা শিশুদের সামনে এসে পুরো শিশুচত্বরের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয়। এদিনও এর ব্যতিক্রম ছিলো না।
বেলা সাড়ে ১১টায় সিসিমপুরের শোয়ে টুকটুকি, হালুমদের নিয়ে শিশুদের মাঝে ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ।
সিসিমপুর কর্তৃপক্ষ জানায়, বিকেল সাড়ে ৩টা এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টাতেও থাকছে সিসিমপুরের শো।
শিশুচত্বরে ঘাসফড়িং, জনতা প্রকাশ, বাংলা একাডেমি, তাকধুমসহ কয়েকটি স্টলে কথা বলে জানা যায়, বই বিক্রি মন্দ হয়নি। এসব স্টলের বিক্রয় কর্মীদের ভাষ্য, মেলায় যারা আসছেন, তাদের বেশিরভাগই বই হাতে বাড়ি ফিরছেন।