রাজশাহী বিভাগের মাধ্যমিক পর্যায়ে গত ২ জানুয়ারি শুরু হয় এবারের পাঠদান কার্যক্রম; কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও মাধ্যমিকে ২৫ শতাংশ বই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। বই না আসায় ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ফাইল নিয়ে চলছে নতুন বছরের পাঠদান। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. দীপকেন্দ্রনাথ দাস বলেন, নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দটাই অন্যরকম। শিক্ষার্থীরা পুলকিত হয়। নতুন উদ্যমে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়; কিন্তু বই-ই যদি হাতে না থাকে, তা হলে পড়াশোনার সঙ্গে আন্তরিকতার সম্মিলন ঘটে না, মনোযোগ হারিয়ে যায়। এ ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামে পাঠদান শুরু হয়েছে; কিন্তু বই না পেয়ে শুরুতেই হোঁটচ খেলো তারা। শিক্ষক পিডিএফ থেকে পড়ালেন; কিন্তু বাসায় গিয়ে বইটি আর পড়ার সুযোগ পেলো না শিক্ষার্থীরা। কারণ সকল শিক্ষার্থী তো পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড বা ফটোকপির সুবিধা পায় না। কাজেই শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথাটি মাথায় রেখে দ্রুত সমস্যার সুরাহা করতে হবে।
রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাথী বসু বলেন, আমাদের স্কুলে বেশ কয়েটা বই এখনো পাইনি। যেসব বই পাওয়া যায়নি সেগুলোর পিডিএফ কপি দিয়ে ক্লাস চলছে। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরজাহান বেগম বলেন, আমাদের স্কুলেও শতভাগ বই পাওয়া যায়নি। যে বইগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। যে বইগুলো এখনো পাওয়া যায়নি, অনলাইন থেকে শিক্ষকরা পিডিএফ ভার্সন নামিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই আমাদের বই আসছে, বিতরণও করা হচ্ছে। যে ক্লাসে যে বই আসেনি ওয়েবসাইটে সেই বইটা দেওয়া আছে। শিক্ষকরা সেই বইয়ের ডাউনলোড কপি প্রিন্ট করে সেটি দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যেই সব বই চলে আসবে।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, এ বিভাগে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলে মোট পাঁচ হাজার ৮৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিকে ৩ হাজার ৯২টি। মাদ্রাসা আছে দুই হাজার ২২৪টি এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫৬৭টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ ৪১ হাজার ১২৮ শিক্ষার্থী আছে। সব শিক্ষার্থীর জন্য নতুন পাঠ্যবই দরকার ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬১২টি। এর মধ্যে গত ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে থেকে ৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেছে।
বিভাগের আট জেলার মধ্যে রাজশাহীতে এক হাজার ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩২ লাখ ৬ হাজার ৫৫টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নওগাঁয় ৮৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৬ লাখ ৭ হাজার ৪৩৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে পৌঁছেছে ৭৬ শতাংশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২১ লাখ ৩ হাজার ৭৩০টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পেয়েছে ৭২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নাটোরে ৫৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৯ লাখ ৪ হাজার ৯৫৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৭১ শতাংশ। তবে বিতরণ করা হয়েছে ৭০ শতাংশ।বগুড়ায় এক হাজার ৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৬ লাখ ৯ হাজার ছয়টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পৌঁছেছে ৭৭ দশমিক ৩ শতাংশ। আর বিতরণ করা হয়েছে ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জয়পুরহাট জেলায় ৩৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৯ হাজার ৭৫৪টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৮১ দশমিক ৭২ শতাংশ। পাবনায় ৬১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৭ লাখ ৩ হাজার ৬৭৬টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পেয়েছে ৮৫ শতাংশ। আর বিতরণ করা হয়েছে ৮০ শতাংশ। সিরাজগঞ্জের ৮৫৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৮ লাখ ৬ হাজার ১৯টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে বই পাওয়া গেছে ৭৮ শতাংশ।