বগুড়া জিলা স্কুলের তিন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত

বগুড়া প্রতিনিধি |

বগুড়া জিলা স্কুলের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুজন দশম শ্রেণির ছাত্র এবং অন্যজন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এতে বাকি ছাত্রদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিদ্যালয়টিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে বলেও বিদ্যালয়ের একটি সূত্র আজ শনিবার নিশ্চিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে করোনার উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী। আজ সন্ধ্যায় তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রভাতি ও দিবা শাখার দশম শ্রেণির দুই ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষক নিশ্চিত করেছেন। তবে পঞ্চম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এমন তথ্য শ্রেণিশিক্ষক তাঁকে জানাননি। তিনি বলেন, দশম শ্রেণির ওই দুই শিক্ষার্থী কয়েক দিন ধরে অনুপস্থিত। পরে শ্রেণিশিক্ষক তাদের অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ।

জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, করোনা পজিটিভ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংক্রমণ যাতে অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে না ছড়ায়, এ জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজন আক্রান্ত হলেও এখনো আশঙ্কা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা নেই।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিলা স্কুলের দুজন শিক্ষক বলেন, দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি তাদের অভিভাবকেরাই নিশ্চিত করেছেন। এর বাইরে পঞ্চম শ্রেণির দিবা শাখার একজন শিক্ষার্থীও করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। এখন পর্যন্ত তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের পর অন্য শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষকদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর নতুন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে অভিভাবকদের মনে। বগুড়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রায়হানুল ইসলাম বলেন, তাঁর ছেলের ক্লাসের কয়েকজন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর জানার পর আপাতত তিনি ছেলেকে বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করেছেন। ইদ্রিসুর রহমান নামে আরেকজন অভিভাবক বলেন, জিলা স্কুলে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সন্তানকে নিয়ে চরম শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটছে। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন। কেয়া ইসলাম নামে একজন অভিভাবক বলেন, শিশুদের করোনার টিকা নিশ্চিত না করে স্কুল খুলে দেওয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিশুদের টিকার বিষয়টি কেউ গুরুত্ব দেয়নি।


বালিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমছে

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনে এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ছিল গড়ে ৯০ শতাংশ। অথচ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আজ শনিবার এই বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার নেমেছে ৭৫ শতাংশে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের শঙ্কা, জ্বর-সর্দি-কাশিসহ করোনার উপসর্গের কারণে অনেক ছাত্রী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে।

তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন দাবি করেন, তাঁর বিদ্যালয়ে এসে কোনো ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, এমন কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই। তবে উপস্থিতির হার কমছে স্বীকার করে তিনি বলেন, করোনার আগে বিদ্যালয়ে ছাত্রী উপস্থিতির হার ছিল ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ। দেড় বছর পর বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনেও ছিল ৯০ শতাংশ। এখন অবশ্য তা ৭৫ শতাংশে নেমেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন কমতে থাকায় ভালো ফলাফল নিয়ে তাঁরা চিন্তিত।

বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী বলেন, জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত বলে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এর বাইরে অন্য কোনো শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত কেউ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়কে অবগত করেননি। শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হলে পরে কী করতে হবে, সে বিষয়ে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হওয়ায় সংক্রমণ যাতে অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য জিলা স্কুল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে এসে কোনো শিক্ষার্থীর করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে আইসোলেশনে রাখতে বলা হয়েছে। যে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্ত হবে, ওই শ্রেণিকক্ষে পরবর্তী কোনো শ্রেণির পাঠদান নিতে হলে অবশ্যই জীবাণুনাশক দিয়ে শিক্ষার্থীদের বসার আসন পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে বিদ্যালয়ে প্রবেশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039098262786865