বগুড়া পলিটেকনিকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া : বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইম জাহানের বিরুদ্ধে বাবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, ফৌজদারি মামলা গোপন করে চাকরি লাভ, ক্ষমতার অপব্যহার, দরপত্রে ভুয়া মালামাল ক্রয় করে অর্থ লোপাট ও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের নম্বর কর্তনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে প্রতিষ্ঠানের সিভিল টেকনোলজি ট্রেডের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুর রহমান শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর অনুলিপি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুদক বগুড়ার উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে সোমবার বিকালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইম জাহানকে ফোন দিলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইম জাহানের বাবা আকবর আলী (মরহুম) ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মে মাসে রংপুর পুলিশ লাইন্স থেকে পালিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমায় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুলিশে যোগ দেন। আকবর আলীর সার্ভিস বুকে পুলিশ সদস্য হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা যান। তার ছেলেমেয়েরা ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধার সাময়িক সনদ গ্রহণ ও গেজেটে অধিভুক্ত করান। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে নন্দীগ্রাম উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন স্বাক্ষরিত মুক্তিবার্তা সংশোধনকালে আকবর আলী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হন। ডেপুটি কমান্ডার বদিউজ্জামান মন্টু সাক্ষী দেন, মুক্তিযুদ্ধে আকবার আলীর কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের যুগ্ম-মহাসচিব এমএ রশীদের নেতৃত্বে যাচাই-বাছাই কমিটিতে আকবর আলীর মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।

অথচ আকবর আলীর তিন মেয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। ছেলে আবু সাইম জাহান বাবার কোটায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে যোগ দেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী তিনি পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা হিসাবে বগুড়া করোনেশন ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজে লেকচারার পদে ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চাকরি অভিজ্ঞতা দেখান। অথচ সে সময় ওই প্রতিষ্ঠানে ওই পদ ছিল না। একই সঙ্গে তিনি বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজেও শিক্ষকতা করতেন। এতে প্রমাণ হয় তার অভিজ্ঞতার সনদও ছিল ভুয়া।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু সাইম জাহানের বিরুদ্ধে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার বিসিএস ক্যাডার ড. রফিকুল ইসলামকে অপহরণ, আটকে রেখে হত্যার হুমকি, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া এবং অস্ত্র প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা হয়। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে চলমান রয়েছে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মার্চ চাঁদে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে দেখার গুজবে বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে নাশকতার মামলা হয়। স্পেশাল জজ আদালত বিচারাধীন এ মামলায় আবু সায়েম জাহান এজাহারভুক্ত আসামি। এসব মামলা থাকায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি বরখাস্ত করে। আবু সাইম জাহান ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ১৫ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তখন তিনি প্রতিষ্ঠানের কাউন্সিল সদস্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন। ওই অর্থবছরে সাবস্টেশন, সোলার সিস্টেম, আবাসিক ভবন, মোটর যান মেরামত, বিভিন্ন মালামাল ক্রয়, বার্ষিক প্রকাশনা তৈরিতে টেন্ডারের নামে ২৫ লাখ টাকা নেওয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। টাকাগুলো আত্মসাৎ করা হয়েছে।

২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের বিদায়ের নামে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেন অধ্যক্ষ। তবে নির্ধারিত ৩০ ডিসেম্বর বিদায় অনুষ্ঠান হয়নি। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে দুমাস পর মাত্র ১৫০ জনকে বিদায় দেন। রাজনীতিমুক্ত এ প্রতিষ্ঠানে সব কার্যক্রম শিক্ষার্থী প্রতিনিধি পরিষদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। কোনো শিক্ষার্থী দাবি-দাওয়া করলে তার নাম লিখে রাখা হয়। শুধুমাত্র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় পাওয়ার টেকনোলজির ছয় শিক্ষার্থীর ষষ্ঠ পর্ব সমাপনী পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে শুধুমাত্র পাশ নম্বর দেওয়া হয়। এতে ওইসব শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068929195404053