বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন পড়ানো হবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বাঙালি জাতির জনক ও বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন। সেই বর্ণাঢ্য সফর বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। বদলাতে থাকা আন্দোলনের গতিপথ, মতাদর্শগত সংগ্রাম তাতে অন্য মাত্রা জুড়েছে। তারই পাঠ নেবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৫৬ সালে। এই বিভাগে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে পঠনপাঠন চালু রয়েছে। এবার তাতে বিশেষভাবে জুড়ছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন অর্থাৎ মুজিবুর রহমানের মতবাদ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান ইমন কল্যাণ লাহিড়ী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে শুধু বাংলার গণ্ডীতে আটকে রাখলে হবে না। এশিয়া ও বিশ্ব রাজনীতিতে তার যে ভূমিকা, সে সম্পর্কে নতুন সিলেবাসে পড়বে ছাত্রছাত্রীরা।’

বৃহস্পতিবার এই বিভাগে উন্মোচন করা হয় মৈত্রী ফলকের। ভারতের ৭৫ ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের স্বাধীনতা উপলক্ষ্যে ফলক উন্মোচন করেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাই-কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্র প্রমুখ।

শিক্ষাক্ষেত্রে দুই দেশের আদানপ্রদান আরও প্রসারিত করতে উপ-হাইকমিশন উদ্যোগী বলে জানান ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর চেয়ার স্থাপনের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিনিময় ব্যাপকভাবে শুরু করার চেষ্টা চলছে।’

যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন ওমপ্রকাশ। তার বক্তব্য, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। মৈত্রী সম্পর্কের মতো কর্মসূচি উভয় দেশের ঐক্যের ভিতকে শক্তিশালী করবে।’

মুসলিম লীগের উদারপন্থী অংশ হিসেবে পরিচিত ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। ভারত বিভাজনের অনেক আগে কলকাতায় এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তরুণ মুজিব। এই শহরের মৌলানা আজাদ কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। থেকেছেন কলেজের ছাত্রাবাসে।বেকার হোস্টেলের যে ঘরে তিনি থাকতেন, সেটি স্মৃতিকক্ষ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।

সেই অর্থে শেখ মুজিবুর রহমান দুই দেশের মধ্যে যোগসূত্র হয়েই রয়েছেন। তার চূড়ান্ত পরিণতি পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতের সমর্থন। তরুণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে মতাদর্শগত সংগ্রাম, তার অধ্যয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিবিড়ভাবে জানতে পারবেন বঙ্গবন্ধুকে।

ইমন কল্যাণ জানিয়েছেন, পাঠ্যসূচিতে কী কী থাকবে তা চূড়ান্ত হবে সিলেবাস নির্ধারক কমিটির আলোচনায়। তারপর বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের পাঠদান শুরু হবে। যদিও একে ‘মুজিববাদ’ শব্দবন্ধের তকমা দিতে রাজি নন এই অধ্যাপক। তার ভাষায়, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শন ও ভাবনা তুলে ধরা হবে পাঠ্যে। যাদবপুরের বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকরাই পড়াবেন ছাত্রছাত্রীদের।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে। ৪৬তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে আকর্ষণের কেন্দ্রে মুজিবের জীবনী, মুক্তিযুদ্ধ। কলকাতা থেকেও এ বিষয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। এবার তার রাজনৈতিক জীবন ঘিরে গভীর অধ্যয়নের সুযোগ তৈরি হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গেই এই কৌতূহল সীমাবদ্ধ নয়। ভারত ও তার বাইরেও একই ধরনের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ উপ হাই-কমিশনের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে কথা চলছে। আশা করছি খুব শিগগিরই শুরু করা যাবে। ইতিমধ্যে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আরো কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপনের জন্য কাজ করছে।’

বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত গবেষণা নিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকেই প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে যে এই প্রতিষ্ঠানে যদি বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার করা যায়। আমরা মনে করছি এটা ভালো প্রস্তাব। মন্ত্রণালয়ের কাছে উপস্থাপনা করা যেতে পারে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031251907348633