জাল সনদ, ভুয়া ইনডেস্ক, অবৈধ নিয়োগবছর পেরুলেও বেতন তুলেই যাচ্ছেন শিক্ষকরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন। একই কলেজের প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ ভুয়া ইনডেক্স তৈরি করে নিজেকে এমপিওভুক্ত করেছেন। প্রভাষক রহিমা খাতুন ও নাজমুল হকের নিয়োগ অবৈধ ছিলো। এ ঘটনা প্রমাণিত হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু এখনো এমপিও বাবদ বেতনের টাকা তুলছেন দায়ী শিক্ষকরা। কয়েকদফা শোকজ করা হলেও তাদের এমপিও বন্ধ করেনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। 

দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাল সনদধারী উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ গত এপ্রিল মাসের এমপিও বাবদ চলতি মে মাসে ৪৯ হাজার ৯৪৯ টাকা পেয়েছেন। ভুয়া ইনডেক্সে এমপিওভুক্ত প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ এবং অবৈধ নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক রহিমা খাতুন ও নাজমুল হক এমপিও বাবাদ পেয়েছেন ২৫ হাজার ৫৮৪ টাকা করে। 

জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে এক তদন্তে ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ ও প্রভাষকদের বিরুদ্ধে ওঠা জালসনদ, ভুয়া ইনডেক্স তৈরি ও অবৈধ নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। গত বছরের এপ্রিলেই প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতিকে শোকজ করা হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এসব বিষয়ে শোকজ করা হয়েছে অধ্যক্ষকে। শোকজ নোটিশে কেনো তাদের এমপিও বাতিল করা হবে না সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু শোকজের পর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে থাকা নথি বিশ্লেষণে জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও অধ্যক্ষ মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতির স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এক শিক্ষক অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনে। সে বছরের সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগ তদন্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছিলো দুদক। একই বছর নভেম্বরে অভিযোগ তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের তৎকালীন পরিচালক, উপপরিচালক (কলেজ) এবং সহকারী পরিচালককে (কলেজ)। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অভিযোগ তদন্ত করেন কর্মকর্তারা। 

তদন্ত প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন, উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহর নেকটার (সাবেক নট্রামস) সনদটি ভুয়া বা জাল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রহিমা খাতুন ও ভূগোলের প্রভাষক নাজমুল হকের নিয়োগে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ অজ্ঞাত ব্যক্তির মাধ্যমে তৎকালীর ব্যানবেইস থেকে ভুয়া ইনডেক্স নম্বর সংগ্রহ করেছিলেন, কিন্তু অর্থ লেনদেনের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে গত বছরের ১৯ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও সভাপতিকে শোকজ করা হয়েছিলো। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখা দায়ী উপাধ্যক্ষ ও তিন শিক্ষকের এমপিও বাতিল করার নির্দেশনা দেয়। পরে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফের প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও দায়ী শিক্ষকদের শোকজ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। 

অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাস সাক্ষরিত শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ, প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ, রহিমা খাতুন, নাজমুল হকের এমপিও কেনো বাতিল করা হবে সে বিষয়ে তাদের শোকজ করে ও একই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতিকে বলা হয়েছিলো। কিন্ত এরপরও বেতন পাচ্ছেন অভিযুক্তরা। চলতি মে মাসে প্রতিষ্ঠানটির এমপিও শিট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ, প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ, রহিমা খাতুন, নাজমুল হক সবাই এপ্রিল মাসের বেতন বাবদ পেয়েছেন সরকারি টাকা। 

অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. মোবাশ্বেরুল ইসলাম জ্যোতি দাবি করেন, যখন তদন্ত হয়েছিলো উপাধ্যক্ষের একটি সনদ জাল বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। বিষয়টি সমাধান করে সঠিক সনদ জমা দিয়ে শোকজের জবাব দেয়া হয়েছে। 

উপাধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। 

ভুয়া ইনডেক্স সংগ্রহের বিষয়ে প্রভাষক বাসুদেব কুমার সিংহ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে আমি যখন নিয়োগ পেয়েছিলাম তখন প্রতিষ্ঠান এমপিওর কোড পায়নি। তখন বেতন হয়নি। ভুয়া ইনডেক্সের যে বিষয়টি বলা হয়েছে তার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন হয়নি।  

প্রভাষক নাজমুল হক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা শোকজের জবাব দিয়েছি। এ বিষয়ে জটিলতা আছে। 

প্রভাষক রহিমা খাতুন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার নিয়োগ বিধিমোতাবেক হয়েছে। শোকজের জবাব দিয়েছি। 

এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তপন কুমার দাসকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

তবে সংশ্লিষ্ট শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন,  ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের বিষয়টি নিয়ে যতদূর জানি কার্যক্রম চলছে। তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন কি-না তা খোঁজ নিয়ে বলতে পারবো। তারা জবাব দিলে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চাওয়া হবে।  

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026679039001465