বরিশাল বিভাগে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল: তীব্র গরমে বরিশাল বিভাগের চারটি জেলায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়া। গত ২০ দিনে প্রায় ১৯ হাজার রোগী জেলা উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে ৯৪১ জন রোগী প্রতিদিন ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির জানান, ২৪ ঘণ্টায় ৪৪১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৭ জন, বরিশাল জেলার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে ১১৪ জন, ভোলায় ৮৯ জন, পিরোজপুরে ৯১ জন, বরগুনায় ১৪৭ জন। বিভাগের মধ্যে ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীতে এখনো ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে ৪৩৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। 

তিনি বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগের চার জেলায় মোট ১৮ হাজার ৮৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ভোলায় ৬ হাজার ৬৩৯ জন। এরপরেই বরিশালে ৫ হাজার ২৬০ জন। বরগুনায় ৩ হাজার ৪৭৭ জন, পিরোজপুরে ৩ হাজার ৪৬১ জন। এ ছাড়া বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ২০ দিনে ১ হাজার ৪০৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ হাজার ২৫৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগের যে-সব জেলায় ডায়রিয়ার সংক্রমণ বেশি ওইসব জেলায় চিকিৎসা পেতেও দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। এরমধ্যে বরগুনা জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন সংকট রয়েছে, পিরোজপুরে রোগীরা শয্যা সংকটে হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে পারছে না। ভোলার হাসপাতালেও শয্যা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বরগুনার গৌরীচন্না ইউনিয়নের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার বলেন, আমার স্বজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ায় তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে বেড না পেয়ে বারান্দায় পাটি বিছিয়ে রোগীর চিকিৎসা করাচ্ছি। বারান্দায় ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে ফ্যান কিনে আনতে হয়েছে।

পিরোজপুরের স্বরুপকাঠির বাসিন্দা শিখা রাণী বলেন, আমার ছোট মেয়ে নিয়ে এসেছি পিরোজপুর সদর হাসপাতালে। এখানে সবাই প্রায় ডায়রিয়ার রোগী। বাধ্য হয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাড়ি ফিরছি। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে আসলেই শুধু কয়েকটা স্যালাইন দেওয়া হয়। এরপর নার্সই সব চিকিৎসা চালান। ডাক্তার রোগী দেখতেও আসেন না। 

কথা হয় ভোলা সদরের বাসিন্দা ইকবাল বেপারীর সঙ্গে। মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, ভোলা সরকারি হাসপাতালে বেডের অনেক সংকট। এমনকি স্যালাইনও পাওয়া যায় না। আমি দুইদিন ছিলাম। বলতে গেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিয়েছি।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন তলায় ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি ইউনিয়নের বাসিন্দা আসিফ বলেন, একদিন চিকিৎসা নিয়েছি। শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে এসে মনে হচ্ছে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। হাসপাতালের মেঝেতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে হচ্ছে।

গরমে প্রতি বছরই দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে বলে জানিয়েছেন ভোলার সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বরিশাল বিভাগ মূলত নদী মাতৃক জনপদ। এ কারণে পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাব এই অঞ্চলে বেশি। প্রতি বছরই ভোলায় ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ে। এ ব্যাপারে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতিও রয়েছে।

তিনি বলেন, সাধারণত মানবশরীরের তাপমাত্রা সহ্য ক্ষমতা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ৪১/৪২ ডিগ্রিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণেই পানি স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। এবারও ভোলায় ডায়রিয়ার রোগী বেশি। আমাদের জনবল সংকট থাকলেও স্যালাইন সংকট নেই। রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, জেলার মধ্যে বেতাগী উপজেলায় স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছিল। তবে আমরা তা দ্রুতই সমাধান করেছি। হাসপাতালগুলোতে নির্দেশনা রয়েছে ডায়রিয়ার রোগীদের দ্রুত ও অতি গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার।

পিরোজপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাপদাহে ডিহাইড্রেশন হচ্ছে মানুষের। এজন্য ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। পিরোজপুরে স্যালাইনের কোনো অভাব নেই। তবে সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যার। এজন্য অনেক রোগী বারান্দায়, মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আগে গড়ে ৮/১০ জন রোগী ভর্তি হতো। এখন দিনে ৩০/৩৫ জন রোগী ভর্তি হন। যেজন্য হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে বিভাগে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর সংবাদ নেই। রোগীদের যেন দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায় সেজন্য পূর্ব প্রস্তুতি মূলত পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। বিভাগে বর্তমানে ১৭ হাজার ৯২৩ পিস আইভি স্যালাইন মজুদ রয়েছে।

তিনি বলেন, সবগুলো সরকারি হাসপাতালে নির্দেশনা দেওয়া আছে ডায়রিয়া আক্রান্তদের দ্রুত সময়ে চিকিৎসার জন্য। রোগীর সংখ্যা বাড়লে আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা ব্যবস্থা করার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026888847351074