বাংলাদেশ ব্যাংকে স্বর্ণের রিজার্ভ ১৪ হাজার কেজি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মজুদ আছে ১৪ হাজার ৩৩ কেজি স্বর্ণ। তবে এর মাত্র ১৭ শতাংশ জমা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের ৪২ শতাংশই গচ্ছিত আছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে। বাকি ৪১ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। স্বর্ণ ছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ হিসেবে রুপা রয়েছে ৫ হাজার ২৪৮ কেজি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

চলতি বছরের ৩০ জুনের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের ভল্টে স্বর্ণ রয়েছে ২ হাজার ৩৬৩ কেজি। আর ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ভল্টে জমা আছে ৫ হাজার ৮৭৬ কেজি স্বর্ণ। বাকি ৫ হাজার ৭৯৪ কেজি স্বর্ণ লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি ব্যাংকে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মজুদকৃত স্বর্ণের পরিমাণ ১৪ হাজার ৩৩ কেজি।

একই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ১৮৬ কোটি বা ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। ওই দিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা। সে অনুযায়ী টাকার অংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের একটি অংশ থাকে স্বর্ণ ও রুপায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের হিসাব শুধু ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং এইচএসবিসির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক মজুদকৃত স্বর্ণের একটি অংশ বিনিয়োগ করে। এ বিনিয়োগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মুনাফা পায়।

চাওয়া মাত্র বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়, এমন সম্পদকে রিজার্ভ হিসেবে গণনা করা হয় বলে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রিজার্ভের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ রয়েছে। রিজার্ভ হিসেবে ততটুকুই গণনা করা হয়, যা চাওয়া মাত্র বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করা যায়। রিজার্ভের ভিত মজবুত করার জন্য প্রায় সব দেশই স্বর্ণ মজুদ রাখে। এক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে থাকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের মজুদকৃত স্বর্ণেরও বড় অংশ ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে গচ্ছিত রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভের অংশ হিসেবে থাকা স্বর্ণের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রায় ৩ হাজার কেজি স্বর্ণ রয়েছে। এ স্বর্ণের কোনো অংশই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত নয়। চোরাচালানসহ বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কাস্টমসের জব্দ করা স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল কাস্টডিয়ান হিসেবে ভূমিকা রাখে। আইনি নিষ্পত্তি শেষে কোনো স্বর্ণ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হলে সেটি স্থায়ী খাতে স্থানান্তর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশুদ্ধ স্বর্ণের বার হিসেবে থাকলে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই কিনে নিয়ে রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত করে। আর অলংকার হিসেবে থাকলে নিলামের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অস্থায়ী খাতে ২ হাজার ৮৫০ কেজি স্বর্ণ রয়েছে। আর স্থায়ী খাতে স্বর্ণ রয়েছে প্রায় ১৫০ কেজি।

গত এক বছরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। এ কারণে রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মূল্যমানও বাড়িয়ে দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ সালের ৩০ জুন রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের মূল্য ছিল ৬ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন রিজার্ভের স্বর্ণের মূল্য ৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের স্বর্ণের দাম ৯৪৪ কোটি টাকা বেড়েছে।

প্রায় দেড় বছর ধরে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জুলাই-নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে ৬০৫ কোটি ডলার। গত অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। গত বছরের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ হিসাবে এক বছরেরও কম সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে। ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করা হলেও এ সময়ে মজুদ থাকা কোনো স্বর্ণ বিক্রি করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একসময় স্থানীয় মুদ্রা ছাপাতেও স্বর্ণের মজুদ থাকতে হতো। কিন্তু বেশ আগেই বিশ্ব অর্থনীতিতে স্বর্ণের গুরুত্ব কমে এসেছে। এখন টাকার মতো স্থানীয় মুদ্রা ছাপাতে স্বর্ণের মজুদ থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রিজার্ভ হিসেবে স্বর্ণের গুরুত্ব এখনো একেবারে হারিয়ে যায়নি। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলো স্বর্ণের মজুদ বাড়াচ্ছে। যদিও আইএমএফ নিজেই অনেক স্বর্ণ বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে।

রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে করেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিনিময় হার নিয়ে চাপাচাপির কারণে রেমিট্যান্স হুন্ডিতে চলে যাচ্ছে। এ কারণে দেশে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহে পতন হয়েছে। আবার রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুই মাধ্যমই এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতির ক্ষত আরো গভীর হবে।

সূত্র : বণিক বার্তা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025811195373535