বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো?

মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতেই ছাপতে হবে কেনো? দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার খবর বলছে, ‘এবারও ভারতীয় দুই প্রকাশককে দেয়া হয়েছে প্রায় এক কোটি পাঠ্যবই ছাপার কাজ।’ তার মানে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়!

আমরা জেনেছি, স্বৈরাচারী সরকারের আমলে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রাথমিকের প্রায় এক কোটি পাঠ্যবই ছাপবে প্রিতম্বর বুকস প্রাইভেট লিমিটেড ও পাইওনিয়ার প্রিন্টার্স। আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহবান ও মূল্যায়ণ শেষ করে ১৭টি লটে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ পেয়েছে ভারতীয় এই দুই প্রকাশক। 

আমরা আরো জেনেছি, কয়েক মাস আগে ডাকা এই অপকর্মের পেছনে ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ভাই টিপু ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও এনসিটিবির তথ্যজ্ঞ বেসরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার সিন্ডিকেটের পছন্দের মোসা নাজমা আখতার। যিনি এনসিটিরিব সচিব। আরো আছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব। এনসিটিবিকে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে পাশ কাটিয়ে এ কাজ কিভাবে হলো? 

বলা হচেছ, বর্তমান সরকারের আগেই সব কেল্লা ফতে। কিন্তু, নতুন কারিকুলামের উপর লিখিত ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বইয়েরও তো টেন্ডার হয়েছিল। শিক্ষা উপদেষ্টা অত্যন্ত সাহস ও দক্ষতার সাথে এবং দায়িত্ব নিয়ে সেই টেন্ডার বাতিল করেছেন। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে কেনো হলোনা? আমরা কি ভারতে বই ছাপতে বাধ্য? পূর্ববর্তী সরকার যেসব কারণে সেই কাজ করতেন আমাদের এখনও কি সেই কাজ করতে হবে?

আমরা জানি, প্রাথমিকের বই ছাপার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের পলাতক সাবেক মেয়র ফজলে নুর তাপসের দীর্ঘদিনের নিজস্ব ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করা ফরিদ আহম্মদ। ভারতীয কোম্পানিকে দেয়া কাজ যেনো বাতিল না হয় সেই বিষয়ে অনড় অবস্থানে প্রাথমিকের সচিব। তিনি ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে আছেন। তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক আমাদের বার্তাকে নাজমা বলেন, দীপু মনির ভাই টিপু টেলিফোন করে খারাপ ভাষায় কথা  বলে টেন্ডার ও বিল ছাড় করার নির্দেশ দিতেন। সচিব হিসেবে সেগুলো না করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আমি বাধ্য হয়েই ওইসব করেছি। 

ভারতীয় প্রকাশকদের বই দেয়ার কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে ভারতীয় প্রকাশকরা বই ছাপছেন। টেন্ডারে অংশ নিয়ে তারা কাজ পেয়েছেন। সেই কাজ বাতিল করতে হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত দরকার হবে। 

আমাদের প্রশ্ন হচেছ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই কাজটি করছে না কেনো?  আমাদের দেশের পাবলিকেশন্স শিল্প ধ্বংস করে পার্শ্ববর্তী বর্তী দেশের প্রেস থেকে বই ছাপতে হবে কেনো? 

সম্প্রতি দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৯২ শতাংশ মানুষই চান না ভারত থেকে পাঠ্যবই ছাপানো হোক।  তাহলে, আমরা তাহলে কাদের কথা শুনব? মানুষের, নাকি প্রশাসনের স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকা ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার এজেন্টদের? 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, আহতরা এক লাখ - dainik shiksha অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা, আহতরা এক লাখ কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর - dainik shiksha কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা ২৫ অক্টোবর সভা মুলতবি, বাড়লো অধ্যাপক হওয়ার অপেক্ষা - dainik shiksha সভা মুলতবি, বাড়লো অধ্যাপক হওয়ার অপেক্ষা এসএসসির সনদ বিতরণ শুরু ২৫ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha এসএসসির সনদ বিতরণ শুরু ২৫ সেপ্টেম্বর জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে মার*ধর, হাসপাতালে মৃ*ত্যু - dainik shiksha জাবিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে মার*ধর, হাসপাতালে মৃ*ত্যু শাহদীন মালিকের অপারগতা, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান আলী রীয়াজ - dainik shiksha শাহদীন মালিকের অপারগতা, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান আলী রীয়াজ জবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম - dainik shiksha জবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম প্রাথমিকের বৈষম্য দূর না হওয়ার বেদনা - dainik shiksha প্রাথমিকের বৈষম্য দূর না হওয়ার বেদনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027670860290527