বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক : ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস ছিল বাঙালি জাতির জীবনের সর্বোচ্চ উত্থানপর্ব। সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার দাবি সোচ্চার হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ থেকে বাংলাদেশের মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে জনগণকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্রশাসন পরিচালিত হতে থাকে। দেশের মানুষ একটি দন্ডে এসে সে দিন একাত্ম হয়েছিল। বিশ্ববাসী এই অসহযোগ আন্দোলনে জনউত্থান দেখে স্তম্ভিত শুধু নয়, অভিবাদনও জানিয়েছিলেন সে সময়। একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে কেবল সেনা ছাউনি ছাড়া বাংলাদেশের সর্বত্র কার্যকর হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ।

বাঙালি তরুণ-তরুণীরা সেদিন সশস্ত্র প্রশিক্ষণে নেমেছিল। রাজপথ জনপদ থেকে গ্রামবাংলা মিছিলের পদভারে কম্পিত হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তানি শাসকরা প্রতারণামূলক আলোচনায় সময়ক্ষেপণ করে এবং শক্তি সঞ্চয় করে। ইয়াহিয়া খান তার সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দেয় বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম অধ্যায় সংযোজনে। তারা ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি নিধনে গণহত্যা শুরু করে। গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ারলেসে পাঠিয়ে দেন। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করার পর সারা দেশে মানুষ অসম প্রতিরোধ যুদ্ধে এগিয়ে আসে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। বুধবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন জাফর ওয়াজেদ। 

নিবন্ধে আরো জানা যায়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে ১০ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন, ছয় সদস্যের সরকার গঠন করে এবং বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার সনদপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। ১১ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশ সরকারে প্রথম প্রধানমন্ত্রী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক ও শক্ত ভিত্তির ওপর সাংগঠনিক রূপ দেওয়ার প্রয়োজনে গঠিত সরকার আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ১৪ এপ্রিল। স্থান হিসেবে মুক্তাঞ্চল চুয়াডাঙ্গা নির্ধারিত হয় এবং এই স্থানকে রাজধানী হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ওয়ারলেসে এ খবর পেয়ে পাকবাহিনী ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বিমান থেকে বোমা ও গুলি চালায় এবং শহর দখল করে নেয়।

জাফর ওয়াজেদ

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল। মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা আমবাগানে শপথ নেয় বাঙালি জাতির প্রথম সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশের পুলিশ ও আনসার বাহিনীর একটি দল মন্ত্রিসভাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। স্থানীয় মিশনারি ছাত্রীরা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবেশন করে। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আয়োজকের অন্যতম ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম লিখেছেন, “কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হলো। একটি ছোট মঞ্চে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, ওসমানী, আবদুল মান্নান ও আমি। আবদুল মান্নান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অধ্যাপক ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এই স্থানের নাম ‘মুজিবনগর’ নামকরণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ পর্যন্ত মুজিবনগর ছিল অস্থায়ী সরকারের রাজধানী।”

শপথ গ্রহণের শুরুতেই ১০ এপ্রিল গণপরিষদ সদস্যদের অনুসমর্থনদান করা স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়, তারই ভিত্তিতে পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। এই ঘোষণাপত্রে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের চারটি মৌলিক নীতির উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয় যে, নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সত্তরের নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যরাই এই সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী এবং অপর তিনজনকে মন্ত্রিসভার সদস্য করে ছয় সদস্যের সরকার গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে মন্ত্রিসভাকে শপথবাক্য পাঠ করান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট সচিব এইচ টি ইমাম ‘বাংলাদেশ সরকার ৭১’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে, যে স্থানের কাছে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, ঠিক সেই স্থানেই দুশো বছরেরও বেশি কাল পরে স্বাধীন, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সূর্যোদয় হলো-এর চেয়ে আনন্দের আর গর্বের কী হতে পারে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ এবং প্রধান সেনাপতি পতাকা উত্তোলন করলেন। সশস্ত্র বাহিনীর অভিবাদন (গার্ড অব অনার) গ্রহণ করলেন। দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, বিপুল সংখ্যক জনতা আর নেতৃবৃন্দ দেখে অভিভূত হলেন।” এই আনন্দ আর গর্বের মুহূর্তে তিনি সেখানে হাজির থাকতে না পারলেও (তখন আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করছিলেন) যারা ছিলেন তাদের কাছে জেনেছেন- ‘সে কী উত্তেজনা, উৎসাহ আর উদ্দীপনা, শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহের মতো।’ শপথ অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত বা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘোষণা করেন যে, ‘বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছে এবং পরিপূর্ণ বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে।’ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘লাশের পাহাড়ের নিচে পাকিস্তান এখন মৃত ও সমাহিত এবং এসব ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে ইয়াহিয়া ও তার সমর্থকরা অনেক আগে থেকেই দুই দেশের তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল।’ বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান রক্ষার উদ্দেশ্যে সংগৃহীত সামরিক সম্ভার যে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ব্যবহার করছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি আজ রুখে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি সাহায্যের আবেদনও জানান।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও সরকারের প্রথম সচিব তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বলেছেন তিনি, ‘নিজেকে মনে হচ্ছিল ধাত্রীর মতো। একটি দেশের জন্ম হচ্ছে। প্রত্যক্ষ করছি।’ বৈদ্যনাথতলায় ছিল ক্যাথলিক মিশন। এই মিশনের সিস্টার, ফাদারসহ শিক্ষার্থীরাও ছিল অনুষ্ঠানের দর্শক-শ্রোতা। সিস্টার ক্যাথরিন গণভালেজ, শপথ গ্রহণের মঞ্চে টানানোর জন্য সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই করে লিখেছিলেন বাংলায় স্বাগতম এবং ইংরেজিতে ওয়েলকাম। তার নিচের লাইনে বাংলা ও ইংরেজিতে ‘জয়বাংলা’। কাপড়ের ব্যানারটি মঞ্চের পেছনে আম গাছের উঁচু ডালের সঙ্গে টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের দুই বাড়ি থেকে দুটি বড় আকারের চৌকি এনে মঞ্চ করা হয়। মিশনের চেয়ার-টেবিল ছিল দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও অতিথিদের বসার আসন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আক্রমণের আশঙ্কায় সেদিন সকালে অনুষ্ঠিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান স্বল্পস্থায়ী ছিল। শপথ শেষে তাজউদ্দীন আহমদ দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ ছাড়া বিশ্ববাসীর উদ্দেশে একটি দীর্ঘ বিবৃতির বাংলা ও ইংরেজি ‘ভার্সন’ সাংবাদিকদের কাছে বিতরণ করা হয়। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুজিবনগরে বাঙালি জাতির আনুষ্ঠানিক জন্ম হলো। সহস্র বছর ধরে নিষ্পেষিত, শোষিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, ঘুমন্ত, হতাশাগ্রস্ত বিচ্ছিন্ন একটি জাতিকে একটি দন্ডে একাত্ম করে বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিলেন। আর পশ্চাৎপদ জাতিকে জাগ্রত করে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের কঠিন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার প্রেরণাদাতা হলেন। ১৭ এপ্রিল বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। আর সেই দেশ পরিচালনায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত হলো সরকার। আইনানুগভাবে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গঠিত রাষ্ট্র ও সরকার সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টিলাভ করে ১৭ এপ্রিল। আর বিশ্বজনমত ক্রমশ এই স্বাধীনতাকে সমর্থন করে বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিল।

মুজিবনগর সরকার, অস্থায়ী সরকার বা প্রবাসী সরকার-যে নামই ডাকা হোক বা পরিচিতি লাভ করুক এই সরকারই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনা করে। এরপর মন্ত্রিসভায় কিছু পরিবর্তন ঘটে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সরকারই ক্ষমতায় থাকে। নির্মোহ দৃষ্টিতে বিচার করলে ৫০ বছর আগে প্রথম বাংলাদেশ সরকার ছিল একটি সফল সরকার। প্রথম সাফল্য হলো, মাত্র ৯ মাসে বিজয় অর্জন করা। সাফল্য হলো বিশ্বজনমতকে বাংলাদেশের পক্ষে নিয়ে আসা। সামরিক বিজয়ের আগেই কূটনৈতিক সাফল্যের সূচক হিসেবে ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি অর্জন। বেতার কেন্দ্র চালু ও প্রচারণা, মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ, শরণার্থীদের দেখাশোনা, যৌথ সামরিক কমান্ড গঠনও এই সরকারের কৃতিত্ব। সরকারের ভিতর পাকিস্তানি ও মার্কিনি মনোভাবাপন্নদের নিষ্ক্রিয় রাখা, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য বিশ্বজনমত সৃষ্টিও এই সরকারের সাফল্য। বিশ্বের আর কোনো প্রবাসী বা যুদ্ধকালীন সরকারের সঙ্গে তুলনীয় নয় যদিও বাংলাদেশের প্রথম সরকার। ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবটিও বিশ শতকে বাংলাদেশের।

১৭ এপ্রিল একাত্তর; মুক্তাঞ্চল মুজিবনগরে রচিত হয়েছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক চরম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সহস্র বছরের গ্লানি শেষে জেগে ওঠা এক জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ২৩ জুন। আর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল পলাশীর অদূরে আম্রকাননে বাংলার সূর্য আবার উদিত হলো। ১৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণিত হলো। ১৭ এপ্রিল একাত্তরেই অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে আজ যে নতুন রাষ্ট্রের সূচনা হলো তা চিরদিন থাকবে। পৃথিবীর কোনো শক্তি তা মুছে দিতে পারবে না।’ আর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে সৃষ্ট স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থাপিত হয়েছে এবং কোনো শক্তিই আর তা মুছে ফেলতে পারবে না।’ না পারেনি, বাঙালির ইতিহাসের বাস্তবতাকে কোনোভাবেই মুছে ফেলা যায়নি গত ৫০ বছরেও। তাই মুজিবনগর দিবসের ৫০ বছর পরও বাংলাদেশ স্মরণ করবে সেই দিনটিকেও জন্মদিনের উচ্ছ্বাসে, আবেগে এবং বিহ্বলতায়। পাশাপাশি শোক উঠে আসে, যখন দৃশ্যমান হয়, মুজিবনগর সরকারের ছয় সদস্যের পাঁচজনই নিহত হয়েছেন অপর একজনের সক্রিয় সহযোগিতা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায়। তখন স্পষ্ট হয়, একাত্তরের পরাজিত শক্তি পঁচাত্তরে এসে সেই ইতিহাস জন্মদানকারী সরকার ও তার নেতৃত্বকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। কিন্তু জাতির হৃদয় ও মনে তাদের স্মৃতি অমলিন। তাই আজ ৫৩ বছর পরও ধ্বনি জাগে কণ্ঠ থেকে ‘জয়বাংলা’। মুজিবনগর সরকারও এই উচ্চারণ করেছিল সে দিন। সরকারের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই বর্ষে বাঙালি দর্পণে নিজের মুখ যদি অবলোকন করে, তবে দেখবে, পরাজিত শক্তির আস্ফালন ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু এরা ধোপে টিকবে না অতীতের মতোই।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032010078430176