বাকৃবি লাইব্রেরিয়ান খাইরুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

বাকৃবি প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলমের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনা ও সংস্কার কাজ নিয়ে স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ উঠেছে। লাইব্রেরির সংস্কার কাজে অসংগতি, একাডেমিক বইয়ের অপর্যাপ্ততা, মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অসমাপ্তি, লাইব্রেরির এসির অচলাবস্থা, কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই গণগ্রন্থাগার তালা দেয়া, লাইব্রেরিতে চাকরি দেয়ার নামে কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাকৃবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এবং কর্মচারী। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম। ছবি : সংগৃহীত

অভিযোগকারী বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণের কাজ এক বছরে করার কথা থাকলেও সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাব এবং কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। তবে এ ব্যাপারে বরাদ্দের টাকার অসংগতির কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। অথচ একই সময়ে লাইব্রেরির বৈদ্যুতিক কাজ, সংস্কার, মেরামত ও লাইব্রেরিয়ানের অফিস কক্ষের আধুনিকায়ন কাজসহ নানা কাজে প্রায় এক কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে বলে জানান লাইব্রেরির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। লাইব্রেরির এসব কাজের ব্যয় ও কেনাকাটা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে প্রশ্নবিদ্ধ কেনাকাটার ভাউচারে কমিটির অনেকেই স্বাক্ষর করেননি বলেও জানানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান খাইরুল আলম বলেন, বাজেটের অধিকাংশ অংশ সোনালী ব্যাংকের ২৫ লাখ টাকা অনুদান প্রায় শেষ। বাকি অংশ বিশ্ববিদ্যালয় দিলেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণের কাজ শেষ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন লাইব্রেরিয়ানের কক্ষ ডেকোরেশেনের জন্য। ‘মুক্তিযুদ্ধ কর্নার’ নির্মাণ শেষ হলে পড়ে থাকা চারটি এসি সংযোজন করা হবে। বই নির্ধারণ করার কমিটির সকল সদস্যের পরমর্শক্রমেই বই সংগ্রহ করা হয়। এ বিষয়ে আমার কোনো এখতিয়ার নেই। লাইব্রেরিতে পিয়নসংকট হওয়ায় পাঁচজনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খণ্ডকালীন নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য লাইব্রেরিতে ২০টি ফ্যান ক্রয়ের জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায়।

এ বিষয়ে খাইরুল আলম বলেন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০টি মীরা স্ট্যান্ডিং ফ্যান কেনা হয়। বাজেট অবশিষ্ট থাকায় তা দিয়ে আইপিএস মেরামত করা হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইব্রেরির রিডিং রুমে ১৫টি মীরা ফ্যান রয়েছে।

নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. অলিউল্লাহ বলেন, লাইব্রেরিতে খণ্ডকালীন কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে কোনো বিভাগের প্রধান প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট বাজেটের আওতায় কন্টেনজেন্সি হিসেবে জনবল রাখতে পারেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণগ্রন্থাগার তালা দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান বলেন, গণগ্রন্থাগার অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য গ্রন্থাগারটির সহকারী পরিচালক বরাবর আমরা কয়েকটি চিঠি দিয়েছি। তবে কোনো চিঠির উত্তর আসেনি বরং এ বিষয়ে গ্রন্থাগারটির পিয়ন বাজে ব্যবহার করেন। তাই স্বল্প সময়ের জন্য তালা দেয়া হয় এবং পরে তা আবার খুলে দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, লাইব্রেরির তিন তলায় পরিত্যক্ত রুমটি দ্রুত পড়াশোনার উপযুক্ত করা হবে। এতে শিক্ষার্থীদের জায়গারসংকট কমবে। লাইব্রেরির কেন্দ্রীয় এসি পরিবর্তন করা হবে। ডিপিপির বাজেটে এসির কথা উল্লেখ আছে। খুব দ্রুতই নতুন এসি সংযোজন করা হবে। আর একাডেমিক বই হিসেবে ই-বুকের আধিক্য বেড়েছে তাই কাগজের বই কমছে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদেরকে ই-বুক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। লাইব্রেরির অসংগতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণে অধিকাংশ বাজেট খরচ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ও তার হিসাব দেখে পরবর্তী বাজেট দেয়া হবে।

সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য লাইব্রেরির পরিচালনা কমিটি থাকলেও গত ৮ বছরে কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, সভা না হওয়ার কারণ বলতে পারছি না। তবে লাইব্রেরিয়ানের সভাপতিত্বে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সভার আয়োজন করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতার দাবি শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha ‘রাজাকার’ স্লোগানের ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা নাহিদ উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ - dainik shiksha উচ্চশিক্ষায় ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057299137115479