বাকৃবিতে জ্যেষ্ঠরা হল না ছাড়ায় আসন পান না নবীনেরা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের ডাইনিং রুমে বসবাস করেন প্রথম বর্ষের ৬৫ শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষের হওয়ায় এখনো হলে আসন পাননি। কবে আসন মিলবে, সেটিও তাঁরা জানেন না।  

শুধু শাহজালাল হলেই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য এমন গণরুমের ব্যবস্থা চালু আছে। আসনসংকট ছেলেদের হলের তুলনায় মেয়েদের হলে বেশি। বেগম রোকেয়া হলের আসন সংখ্যা ১০০০। তবে সেখানে অন্তত ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী থাকেন। অতিরিক্ত ৪০০ শিক্ষার্থী বসবাস করেন হলের অতিরিক্ত ডাইনিং রুম, গণরুম, টিভি রুমসহ বিভিন্ন কক্ষে।

বেগম রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি কক্ষে ১০ বা ১৫ জন থাকলেও আমরা সবার জন্য পৃথক বিছানা দিয়েছি। পড়ার জন্য পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা করেছি।’

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এখানে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হলে আসন (সিট) পাওয়া খুব কঠিন। পড়াশোনা শেষে চাকরি না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীরা হলে থাকায় নবীনরা সে আসন পান না। ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য হল রয়েছে পাঁচটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৮ হাজার ৮৮। ১৪ হলের মোট আসন ৬ হাজার ১২৬।

গাদাগাদি করে বসবাস

শাহজালাল হলের মোট আসন ৩২৪টি। বর্তমানে চার শর বেশি শিক্ষার্থী থাকছেন। ডাইনিং রুমকে গণরুম করে সেখানে রাখা হয়েছে ৬৫ জনকে। তাঁদের সবাই প্রথম বর্ষের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ৬৫ শিক্ষার্থীর জন্য গণরুমে রয়েছে ৩০টি বিছানা। ছোট ছোট বিছানায় দুজন করে থাকতে হয়।

শাহজালাল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. কামরুল হাসান বলেন, বর্তমানে হলে সংস্কার কাজ চলছে। যে কারণে ডাইনিং রুমে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। এ সংকট দ্রুতই নিরসন করা হবে।

শাহজালাল হলের মতো ছাত্রদের বাকি হলগুলোতে গণরুম না থাকলেও প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু হলের নিচতলার আটটি কক্ষে থাকেন প্রথমবর্ষের ৬০ জন।

প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদের সব হলেই বসবাস করেন পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। তাঁরা হলে থেকেই চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করেন। এমন শিক্ষার্থীর সঠিক হিসাব না থাকলেও দুই হাজারের কম হবে না বলে জানান প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পর হলে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর হতে পারি না। তবে বিসিএস বা অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ হওয়ার পর একসঙ্গে অনেকেই হল ছেড়ে চলে যান। ওই সময় গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীরা কক্ষ পেয়ে যান।’

ছাত্রলীগ নেতারা থাকেন আয়েশে

সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণরুমে গাদাগাদি করে থাকলেও ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী থাকেন আরাম–আয়েশে। তাঁদের অনেকেই এক কক্ষে একা বা দুজন করে বাসবাস করেন। কেউ কেউ একাধিক হলে নিজের নামে কক্ষ রাখেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের চারজনের একটি কক্ষে একা থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান ওরফে রিয়াদ। একটি কক্ষে একা থাকার পাশাপাশি একই রকম আরও একটি কক্ষকে তিনি ব্যবহার করেন ‘রাজনৈতিক চেম্বার’ হিসেবে। কেউ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ওই চেম্বারে বসেন।

বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ এ কে এম শাকুর আহম্মদ ছাত্রলীগ সভাপতির একা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমার হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে না।’

ছাত্রলীগ সভাপতি তায়েফুর রহমান এক কক্ষে একা থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ‘রাজনৈতিক চেম্বারের’ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওই কক্ষটি ছাত্রলীগের চার কর্মীর নামে। তাঁরা ওই কক্ষ আমাকে ব্যবহার করতে দেন। রাতে তাঁরা ওই কক্ষেই থাকেন।’

উপাচার্যের ভাষ্য

হলের আসনসংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, ‘ছাত্র হলে সংকট খুব কম হলেও ছাত্রীদের হলে এ সংকট অনেক বেশি। সংকট নিরসনের জন্য আমরা কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের ওপরে আমরা ছাত্রীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। সেখানে এখন ২০০ ছাত্রী ভালোভাবে থাকছেন। এ ছাড়া ছাত্রীদের আরও নতুন দুটি হলের কাজ দ্রুতই শুরু হবে। ওই দুটি হলে ২ হাজার ৪০০ আসন থাকবে। ছাত্রীদের বর্তমান হলগুলোতে আসন বাড়ানোর কাজ চলছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005709171295166