ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১২০০ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাস। এর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে লেগে যায় অনেক সময়। এর মধ্যে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষপ্রান্তে আছে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল। প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর আবাসন সেখানে। তবে হল থেকে অনুষদ ভবনে ক্লাস করতে যেতেও বেশ সময় লাগে। আর এ বিষয়টির বেশ কদিন আগেই ভিন্নধর্মী এক পদক্ষেপ নিয়েছে সোহরাওয়ার্দী হল প্রশাসন ও হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হলের মধ্যে দীর্ঘদিন পড়ে ছিল কিছু সাইকেল। অব্যবহৃত সাইকেলগুলো যেমন হলের গ্যারাজের জায়গা নষ্ট করছিল, তেমনি কাজেও আসছিল না। হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রবিউল করিমের সহযোগিতায় কয়েকজন ছাত্রনেতার উদ্যোগে মালিকবিহীন সাইকেলগুলোকে আলাদা করা হয়।
সেগুলো মেরামত করে করা হয় ব্যবহার উপযোগী। এরপর চালু হয় জয় বাংলা বাইসাইকেল সার্ভিস সেবা। এখান থেকে একজন শিক্ষার্থী মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে আট ঘণ্টার জন্য সাইকেল নিয়ে ব্যবহার করতে পারবে। সাইকেল নিতে হলে গ্যারাজে রাখা খাতায় নাম আর আইডি নম্বর লিখলেই হলো। আর এতে যে টাকা ওঠে, তা ব্যয় হয় সাইকেল মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজেই।বিশাল এ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিকাল ক্লাসগুলো সাধারণত একাডেমিক ভবন থেকে কিছু দূরের ফার্মে হয়। তাদের জন্যই বেশ কাজে আসছে এ সেবা।
বাকৃবির ছাত্রলীগ সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান রিয়াদ বলেন, হলে অনেক পুরোনো সাইকেল থাকে যেগুলো সিনিয়ররা রেখে চলে যানয়। আবার কিছু সাইকেল নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে পরিত্যক্ত হয়। আবার হলে অনেকে থাকে, যাদের সাইকেল নেই বা তারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তারা এ সাইকেলগুলো ব্যবহার করতে পারছে। আবার ক্যাম্পাসে নতুন শিক্ষার্থী যারা আসছে, তারাও ক্লাসে যেতে এই বাইসাইকেল সেবা ব্যবহার করতে পারছে। আমি মনে করি, আমাদের এ জয় বাংলা বাইসাইকেল সার্ভিসের মতো অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলেও একই উদ্যোগ চালু করা যেতে পারে।
সাইকেল সেবাটি ব্যবহার করে সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এম এ ইউসুফ বলেন, যে নষ্ট সাইকেলগুলো একসময় হলের জায়গা দখল করে অবহেলায় পড়ে ছিল, সেগুলো এখন শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের বন্ধু। হল থেকে অনেক সময় জরুরি স্বাস্থ্যসেবাও নিতে হয়। আমাদের অনেকের আবার ফার্মে ক্লাস হয়। সেগুলো বেশ দূরে। সেখানে যেতে অনেককে টাকা খরচ করে রিকশায় যেতে হতো। এ মূল্যস্ফীতির দিনে বাড়তি খরচ কেউ করতে চায় না। তাই ২ টাকার এ সাইকেল সেবা রীতিমতো আশীর্বাদ।
সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মিশু মোরশেদ বলেন, এ জ্যামের শহরে সাইকেল চালানোর মজাই আলাদা। বিশেষ করে শহরে যাওয়া-আসায় অনেক টাকা ও সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছে এগুলো। হলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান বলেন, হল থেকে অনেক সময় খাবার আনতে আব্দুল জব্বার মোড়ে যেতে হয়। তখন অনেকেই ব্যবহার করছে সাইকেল সেবাটি। আবার কৃষি, ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীদেরও কাজে আসছে বেশ।