করোনার টাইফয়েডে দেশ ধুঁকছে। সেই টাইফয়েডে সজোরে কাঁপছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন এবং অনেকে সামাজিক মর্যদার সাথে সামঞ্জস্যহীন পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। কেজি স্কুল ও কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু কিছু ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গছে এবং অনেকগুলো চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে ব্যয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। তাদের আয়ের ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় দেড়শ। এভাবে যত্রতত্র এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এতে না বাড়ে শিক্ষার মান না হয় শিক্ষার কোন কাজে। সেখানে মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়ার পরিবর্তে সবক্ষেত্রে মান যাতে অর্জিত হয় সেজন্য অত্যাধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রচলন করার জন্য বাজেট প্রয়োজন। সেটির কোন উল্লেখ আমরা এই বাজেটে দেখতে পেলাম না, বরং বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর নেয়ার একটি ঘোষাণা দেখলাম। এতো শিক্ষার মান বাদ দিয়ে বাণিজ্যিকরণের কৌশল! অলিতে গলিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে কর্মসংস্থান বাড়ানো আর শিক্ষার মান তলানীতে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাংলাদেশসহ প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাজেটের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, বাজেটের গন্ধ পাওয়ার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। যার ব্যতিক্রম এবারও হয়নি। তেলের দাম প্রতি লিটার নয় থেকে এগার টাকা ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে, বেড়েছে চালের দাম, আলু পেয়াজের দাম। মাঠপর্যায় থেকে নীতি নির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত সরকারের যারা সরাসরি উপকারভোগী তারা বাজেট ঘোষাণার সাথে সাথে মিছিল বের করেন, সব মিডিয়াতে প্রচার করতে থাকবেন মাসের পর মাস, এটি জনকল্যাণমুখী বাজেট, এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাজেট ইত্যাদি।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
রাষ্ট্রের সম্পদ যারা লুট করতে থাকে তারা যাতে আরও বেশি বেশি লুট করতে পারে তার জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় বাজেটে। যার ফলে প্রতি বছর রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমান বাড়তেই থাকে, সাধারণ মানুষের জন্য ’ ভ্যাট’ নামক ট্যাক্সের বোঝা চাপানো হয়। যার ফলে দশ টাকার একটি পানির বোতল কিনলেও দুই-তিন টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আর দুটো জায়গায় জনগণকে ধোকা দেওয়ার দুটি বিষয় সংযোজন করা হয়। তার একটি হচ্ছে, কয়েকটি খাতের টাকা একত্র করে বলা হয় যে, শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অমুক অমুক আইটেমের দাম কমবে। বাজেটের পর কোন জিনিসের দাম কোনদিন কমেনি।
ইংরেজি মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ইংরেজির শেখার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং সাথে সাথে চীন, জাপান, কোরিয়াতেও ইংরেজির দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। যদিও এই দেশগুলো প্রায় পুরোপুরি স্বাবলম্বী। আর আমরা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বহিঃবিশ্বের ওপর নিভরশীল, তাই আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিদেশি ভাষা কার্যকরভাবে শেখানোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। আমরা আমাদের মাতৃভাষা অবশ্যই সঠিকভাবে শেখাবো, সাথে সাথে ইংরেজির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এজন্য যে, এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় হাতিয়ার। আমাদের দেশের যেসব অদক্ষ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কাজ করেন তাদের বৈদেশিক ভাষা শেখানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে, এখানে গোঁজামিল দেওয়া কিংবা এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। আমরা বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে প্রথম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ইংরেজি পড়াচ্ছি যা একেবারেই ‘ট্রাডিশনাল’। শিক্ষার্থীরা এতে ভাষা শিখছে না, পরীক্ষায় যেভাবে পাস করতে হবে তারা সেভাবে একটি বিষয়ের মতো ইংরেজি পড়ছে যা বৈদেশিক মুদ্রাঅর্জন আর উচ্চশিক্ষা গ্রহণ-এর কোনটিতেই কাজে লাগছে না। এটি যদি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে বেসরকারি পর্যায়ে, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে কিভাবে তা সম্ভব সেজন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। ভাষাগত সমস্যার কারণে আমাদের দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিকসহ উচচশিক্ষিতরাও দেশের বাইরে তাদের কাঙ্খিত সম্মানী থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। বিষয়টি বার বার বলা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছেনা।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা গতবছর ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭কোটি টাকা। মাধ্যমিকে ৩৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা ছিল ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, গতবছর এটি ছিল ৮ হাজার ৩৪৫কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২২ কোটি বাকীটা অপারেটিং ব্যয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩২০ -কোটি, বাকীটা অপারেটিং ব্যয়। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় উন্নয়ন ব্যয় বাবদ ২ হাজার ৩১০কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, বাকীটা অপারেটিং ব্যয়। শিক্ষাখাতে প্রতি বছর বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে। এটিতো অবশ্যই করতে হবে। শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন না পেলে তারা কিভাবে শিক্ষাদানের মতো মহৎ কাজে নিজেদেরকে মনোনিবেশ করবেন? এখন শিক্ষার উন্নয়নে যেসব খাত আসে সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক, পেডাগজিক্যাল এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ। এখন প্রশিক্ষণ হচ্ছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। প্রশিক্ষণ দিচ্ছে টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলো, নায়েম এবং সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রশিক্ষণে বাজেট আছে, খরচ করো। কি কাজে লাগল বা না লাগল, কার প্রশিক্ষণ প্রয়োজন , কিভাবে তাদের বাছাই করতে হবে এগুলো কিছুই দেখা হয়না। শুধু বাজেট আছে খরচ করো। তারপরও শিক্ষার বাজেট থেকে যায়। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে কলেজ শিক্ষকদের এবং বিসিএস নন-ক্যাডার এবং সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা যখন শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন তারা কিন্তু শিক্ষার্থীই, একজন শিক্ষক হিসেবে তাদের জানা প্রয়োজন শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্ক এই আধুনিক যুগে কেমন হওয়া প্রয়োজন, কোন বিষয় কিভাবে পড়াতে হবে, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে,দূরন্ত শিক্ষার্থীদের কিভাবে মানেজ করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ না দিয়ে তাদের সরাসরি শ্রেণিকক্ষে প্রেরণ করা হয়। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ যাতে যথাসময়ে সম্পন্ন হয়, এখানে যাতে বাজেট ঘাটতি না থাকে সে বিষয়টির উল্লেখ থাকতে হবে।
আমরা জানি যে, হাজার হাজার শিক্ষক আছেন যাদের কোন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ হয়নি। আবার অনেক শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন তাদেরকেও প্রশিক্ষণে ডাকা হয়। আবার প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানে টিটিসি বা নায়েমে ডেকেই দিতে হবে সেটিও নয় কারণ শিক্ষকরা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এসে যে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন, তাদের শ্রেণিকক্ষগুলোর অবস্থা সেখান থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন। ফলে অধিকাংশ প্রশিক্ষণই কাজে লাগেনা। এটির দিকেও নজর দিতে হবে।
করোনার কারণে বাল্যবিবাহ ও ঝরে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিশুশ্রমও বাড়ছে। শিক্ষায় চলমান এই বিপর্যয় রোধকল্পে শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা আবশ্যক। উপরন্ত ইউনেস্কো গঠিত দেলরস কমিশন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাপ্ত মোট বৈদেশিক সহায়তার ২৫ শতাংশ অর্থ শিক্ষাখাতে ব্যয় করার জন্য যে সুপারিশ আছে বাংলাদেশের তা মেনে চলা উচিত। আগামী ২-৩ বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে কোভিড-১৯ এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ১১-১২শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ১০ ডলার, ভারতে ১৪ডলার, মালয়েশিয়াতে ১৫০ ডলার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি যুক্তিযুক্ত সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন যা প্রাথমিক স্তরের জন্য ১:৩০, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমকি ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য ১:৪০ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১:২৫এর বেশি নয়। এসব বিষয়ের প্রতিফলন বাজেটে ঘটেনি।
তবে, এমপিও কাঠামোর মধ্য না থাকা বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এবং ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের জন্য ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর সংশোধিত (২০২০-২০২১) বাজেটে অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ৪০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ভবন মেরামত ও সংস্কার খাতে ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় এসব অঙ্ক যদিও অপ্রতুল, তারপরেও ভাল পদক্ষেপ বলতে হবে। বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নতুন এমপিওর বাজেট রাখা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে হবে কারণ এতে দেশের সম্পদের একটা ভারসাম্য রক্ষিত হয় , দারিদ্র দূরীকরণ হয়। এখানে গ্রামীণ শিক্ষিত বেকারদের চাকরি হয়, গ্রামীণ অস্বচছল পরিবারের ছেলেমেয়োরা লেখাপড়ার সুযোগ পায়।
রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিশাল অপচয় হয় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে। রেলওয়ে, বিমান, বিটএমসি, বিজিএমসসি, বিআরটিএসহ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে তার তুলনায় মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য খরচ করা রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাষ্ট্রায়াত্তখাতে রাখার কোন যুক্তি আছে? শুধুমাত্র দুর্নীতিবাজদের রাষ্ট্রীয় অর্থ দিয়ে লালন-পালন করা ছাড়া আর কোন কাজে লাগছে না। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান অনেক উন্নত আর দুর্নীতিও কম। আমাদের প্রয়োজনই এই দুটো। বাজেটে আমরা তা কখনই দেখিনা।
সরকারী দপ্তরগুলোর স্বচ্ছতা, জাবাদিহিতা এবং দক্ষতার বিষয় বাজেট বক্তৃতায়ই সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যা করা হয়না , এবারও হয়নি। কোন সময়ের মধ্যে এবং কিভাবে দেশের নাগরিকরা সরকারী অফিসে সেবা পাবেন। অফিস আছে, বড় বড় ভবন আছে, দপ্তর আছে নেই সেবা। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা মনে করেন তারা সরকারের কাজ করেন অর্থাৎ উপরের নির্দেশ যেভাবে আসবে সেভাবে কাজ করবেন, আর তই সেবা প্রত্যাশীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাজেট যতই বাড়ানো হোক দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসছে না, আসবে কিভাবে? এই অর্থ যারা ব্যয় করবেন তাদের অবশ্য পালনীয় একটি জনকল্যাণমুখী নির্দেশনা থাকতে হয় এবং সেটি আবার জনগণের জানার সুযোগ করে দিতে হয়, তা না হলে সেবাগ্রহণকারী ও সেবাদানকারীদের মধ্যে এক বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়। এই গ্যাপ দিনে দিনে কমার কথা কিন্তু সরকারি অফিস ও দফতরে ঘুরে ঘুরে যা দেখলাম তাতে সর্বত্রই প্রমাণ পেলাম যে, বিশাল গ্যাপ তৈরি হয়ে আছে। কমানোর কোন প্রচেষ্টা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময়ের দুই তিন ঘন্টা পরেও কাউকে অফিসে পাইনা, অধিকাংশ রুম তালাবদ্ধ, অফিসে আসলেও তারা নিজেদের মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। যাদের সেবা প্রদান করার কথা তার চেয়ে উপরোস্থদের খুশী করা নিয়ে সবাই ব্যস্ত অর্থাৎ নিজেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। সেবা প্রদান করবেন কখন? যে কাজটির জন্য প্রয়োজন দুই ঘন্টা, সেই কাজ মাসাধিককালেও সম্পন্ন হয়না সরকারী অফিসে। মনে হয় যেন, ব্রিটিশের আমলকেও হার মানিয়েছে। আমরা দেখে, প্রত্যক্ষ করে দুচার লাইন পত্রিকায় লিখতে পারি, তাতে তাদের যে কিছু আসে যায়না বা তাদের কিছু হবেনা তা তারাও জানেন, আর এজন্যই সর্বত্রই চলছে গাছাড়াভাব। জনগণ এগুলো কাকে জানাবে? শুধু গুমরে মরছে তাদের চাপা কান্না। উৎকোচের জন্য ফাইল চালাচালি, এলোমেলো কথা এগুলো কি এদেশের সরকারি অফিসগুলো থেকে কোনদিনই দূর হবেনা?
লেখক : মাছুম বিল্লাহ, ব্রাকের শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত।