বাবা ওঠো আম খাবো, কবরের সামনে তিন বছরের ইসরাত

পলাশ রায়, ঝালকাঠি |

বাবার মরদেহ নানা বাড়িতে পৌঁছায় গত ২১ জুলাই রাতে। কফিনে ঢাকা মুখ খোলা হয় পরিবার ও আত্মীয়দের শেষ দেখানোর জন্য। তিন বছরের শিশুটি তখনো বোঝে না তার বাবা আর ঘুম থেকে কোনোদিনই উঠবেন না। তাইতো মামা মো. মহিবুল্লাহকে বারবার বলছিলেন ‘বাবা ওঠে না কেনো, আমি আম খাবো। আমাকে আম দিতে বলো।’ তারপর থেকেই বড় ভাই কিংবা মামার সঙ্গেই রোজই কবরস্থানে যান বাবার ঘুম ভাঙাতে, কথা ছিলো ঢাকা থেকে তার জন্য আম আনবে। কিন্তু আম ছাড়াই নিথর দেহে ফিরেছেন প্রিয় বাবা। 

শ্যালক মো. মহিবুল্লাহ জানান, ঢাকায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের একজন পরিচালকের গাড়ি চালাতেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার বালকদিয়া গ্রামের কামাল হোসেন (৩৮)। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর একই জেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগড়বাড়ি গ্রামের ইসমাইল হাওলাদারের বড় মেয়ে সাদিয়া আক্তার রানীর সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালিয়ে জীবিকা চালিয়ে আসছিলেন কামাল।

দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকার বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন কামাল। আর ঝালকাঠির শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকায় স্ত্রী সাদিয়া দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। বড় ছেলেটির বয়স ১৩ বছর। তিনি স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে এবং মেঝ ছেলেটি কিন্ডারগার্টেনের প্লে গ্রুপে পড়েন। ছোট মেয়েটির বয়স ৩ বছর। সাড়ে ৪ বছরের আব্দুল্লাহ ও তিন বছরের ইসরাত এখনো বোঝেন না তাদের বাবা আর ফিরবেন না। তাই তো ঘুমিয়ে আছে ভেবে রোজ কবরের সামনে যান বাবার ঘুম ভাঙাতে। ১৩ বছরের বড় ছেলে সামিউল ইসলাম শোকে বাকরুদ্ধ বলে জানান মামা মহিবুল্লাহ।

নিহত কামালের বড় ছেলে সামিউল বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিলো আমি একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হবো। কিন্তু এখন আর বাবা নেই, আমার লেখা পড়ার খরচ এখন কে দেবে?

এদিকে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে এখনো বাবাকেই খুঁজে ফিরছেন অবুঝ শিশু ইসরাত। সুযোগ পেলেই বড়দের সঙ্গে বাবার কবরের কাছে ছুটে যান। বলেন, বাবা ওঠ আমার জন্য আম নিয়ে এসো, আমি আম খাবো।

মহিবুল্লাহ বলেন, তার ভগ্নিপতি দুই তিন মাস পর বাড়িতে আসতেন। আর তখন সন্তানদের জন্য অনেক ফলমূলসহ খাবার নিয়ে আসতেন। কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি ভালো হলেই বাড়ি আসার কথা ছিলো। কিন্তু সাবাইকে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর স্ত্রী সাদিয়া আক্তার রানী। বাবা হারা এই তিন সন্তানকে নিয়ে কীভাবে আগামী দিনগুলো পাড়ি দেবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমার সন্তানরা আজ বাবাহারা। ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারি িনা। ওদের নিয়ে আমি এখন কোথায় দাঁড়াবো?
আত্মীয়, স্বজন ও এলাকাবাসীও কোনোভাবেই এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। তাদের কাছেও নেই কোনো প্রকার সান্ত্বনা জানানোর ভাষা। তারা বলছেন, এমন সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

প্রসঙ্গত, গত ২০ জুলাই সকালে দুই দিন পর নাস্তা খেতে ঘর থেকে বের হয়ে বাড্ডার শাহজাদপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কামাল। গত ২২ জুলাই ভোরে ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048580169677734