বাবা-মার ছাড়াছাড়ির পর অন্ধকার জগতে পা বাড়ান শিলাস্তি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে আলোচনায় এসেছে শিলাস্তি রহমানের নাম। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, খুনের হুকুমদাতা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীনের বান্ধবী হলেন শিলাস্তি রহমান। আলোচিত এই তরুণীকে কেউ 'অন্ধকার জগতের' আবার কেউবা 'রহস্যময়ী' বলে মনে করছেন। কিন্তু কেন অন্ধকারের পথে পা বাড়ালেন শিলাস্তি? তা কি ইচ্ছাকৃত নাকি পারিপার্শ্বিক অবস্থাই তাকে এই পথে যেতে বাধ্য করেছেন এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে। 

শিলাস্তি রহমান

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধবুরিয়া ইউনিয়নের পাইসানা গ্রামে বাড়ি হলেও শিলাস্তিরা কখনো সেখানে থাকেননি। তার বাবা আরিফুল ইসলাম প্রথমে কাপড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে অন্য ব্যবসায় চলে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জীবনের শুরুতেই খারাপ ছিলেন না শিলাস্তি রহমান। উত্তরায় তার অত্যন্ত কাছের এক আত্মীয় জানান, তরুণ বয়সে খুবই 'ইননোসেন্ট' থাকলেও বাবা-মার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে অন্ধকার জগতে পা বাড়ান শিলাস্তি। ছোট বোন সুবার দুবার বিয়ে হয়ে ছাড়াছাড়ি হলেও শিলাস্তির এখনো বিয়ে হয়নি। যে  ফুফুর তত্ত্বাবধানে শিলাস্তি বেড়ে ওঠেন, সেই বিমানের কেবিন ক্র হোসনে আরাও তাকে শৃঙ্খলার জীবনে থাকতে সাহায্য করেননি। বরং তার সান্নিধ্যে শিলাস্তি আরো বেপরোয়া জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। হোসনে আরার বিয়ে হয়েছে মোট তিনবার।  কেবিন ক্র দায়িত্ব পালনকালে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব লাভের জন্য তিনি সে দেশে গিয়ে একটি সন্তান জন্ম দেন। এ জন্য এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে  বিশ্বের অনেক দেশে যেতে পারলেও বিমানের কেবিন ক্র হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারেন না।

শিলাস্তি থাকেন হোসনে আরার কেনা উত্তরার বাসায় (বাড়ি নং-১২, রোড নং-৯, সেক্টর-১৪)। এখানে দুটি ফ্ল্যাট পাশাপাশি কিনেছেন হোসনে আরা। এই দুই ফ্ল্যাটে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ শিলাস্তির বাবা আরিফুল ও হোসনে আরার ভাই-ভাতিজারা বসবাস করেন। কিন্তু পরিবারের কারও সঙ্গে কারও সম্ভাব নেই। নানা সময়ে ওই বাসায় প্রায়ই ঝামেলা হয়। একাধিকবার এসব ঘটনা নিয়ে উত্তরার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাসায় সালিশ-বৈঠকও হয়েছে। তবে কোনো সমাধান হয়নি। শিলাস্তির বাবা তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও প্রায়ই মারধর করেন। এই মারধরের কারণেই প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ শিলাস্তির মা ডিভোর্স নিয়ে এখন অন্যত্র সংসার করছেন। শিলাস্তির বাবা পরনারীর সঙ্গে অপ্রীতিকর অবস্থায় ফ্ল্যাটের ছাদে   দুবার ধরা পড়েন। এই নিয়ে হোসনে আরার পরিবারের সঙ্গে ওই ভবনের অন্য মালিকদের বেশ কয়েকবার ঝগড়াঝাটি হয়েছে। উত্তরায় মোট তিনটি ফ্ল্যাটের মালিক শিলাস্তির ফুফু হোসনে আরা। জানা গেছে, তিনি তিনটি বিয়ে করেছেন। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরে নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তার সঙ্গে শিলাস্তির দাদাও থাকেন।

হোসনে আরার চার ভাই বেকার। তারা কোনো কাজকর্ম করেন না। বিমানের ঘনিষ্ঠ একজন কেবিন ক্র  জানান, ভাই-বোন, তাদের চার স্ত্রী ও তাদের সন্তানসহ মোট ১৮ জনের পরিবার পুরোটাই হোসনে আরার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তবে হোসনে আরা ও তার পরিবারের হাতে ওই বিল্ডিংয়ের (১৪ নম্বর সেক্টরের বাসা) ৯টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা জিম্মি বলে জানা যায়। শিলাস্তির ফুফু হোসনে আরার সঙ্গে সমাজের অনেক প্রভাবশালীর সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকার পুলিশের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা হোসনে আরার আত্মীয়। যার ভয় তিনি প্রায়ই প্রতিবেশীদের দেখান। বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় ওই বাসায় পুলিশ এলেও আজ পর্যন্ত হোসনে আরার পরিবারের সদস্যদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

ফলে প্রতিবেশীরা ভয়ে কথা বলেন না। হোসনে আরার পুরো পরিবার অত্যন্ত বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল। ভাই-বোন একসঙ্গে নেশা করেন, এমন অভিযোগ ওই পাড়ায় বসবাসকারী বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী এমন তথ্য জানিয়েছে। গত ১৫ বছরে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোনা আটক ও জব্দের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে হোসনে আরার নাম উঠে আসে। বেশ কয়েকজন পাইলটসহ অর্ধশতাধিক কেবিন ক্র নাম বিভিন্ন সময় ডিএমপির অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে বিমানের পরিচালক প্রশাসনের কাছে পাঠানোর কথা জানা যায়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছিনতাইয়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিল। যেটিতে কেবিন ক্র হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন শিলাস্তির ফুফু হোসনে আরা। ওই দিন ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনরত পাইলট ও কেবিন ক্রসহ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টদের গণভবনে ডেকে প্রধানমন্ত্রী তাদের অভিনন্দন জানান ও প্রশংসা করেন। উত্তরায় শিলাস্তির প্রতিবেশীরা জানান, ওই ঘটনার পর হোসনে আরার দাপট আরও বেড়ে যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029380321502686