বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন

মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

পাঠ্যবই ও পরীক্ষার মূল্যায়নে ফের সংশোধন আসছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গণদাবির মুখে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে চালু করা নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধন করে গত ১ সেপ্টেম্বর একটি পরিপত্র জারি করে বর্তমান সরকার। একই পরিপত্রে পাঠ্যবই সংশোধনের বিষয়েও নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা পরিস্ফুট হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আগের পরিপত্রে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর উদ্যোগ নেন। তার নির্দেশনায় চলতি সপ্তাহেই সংশোধিত পরিপত্র জারি করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ওই পরিপত্রে কিছুটা অস্পষ্টতা হয়তো আছে, সেটুকু আরও স্পষ্ট করা হবে। 

ওই পরিপত্রে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান পুস্তক যেগুলো অভিজ্ঞাতাভিত্তিক কারিকুলামের উপর লিখিত (যাকে আমরা নতুন কারিকুলাম বলে জানি) সেখান থেকে সংশোধন

করে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। তার কয়েকটি  কারণ ছিলো। একটি হচেছ সময় স্বল্পতা, দ্বিতীয়টি হচেছ- ইতোমধ্যে সেই বইয়ের টেন্ডার হয়ে গেছে, তৃতীয়ত -পূর্ববর্তী বইয়ের কিছু চ্যাপ্টার পুরনো কারিকুলামেও যেতে পারে। কিন্তু দেশের শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত ‘বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও এক বছর ভুগবেন কেনো? শীর্ষক কলাম সম্পর্কে দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হলে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা পুরনো কারিকুলামেই যাব। এক্ষেত্রে টেন্ডারে সমস্যা হলে সেটিও দেখব এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করব। 

প্রসঙ্গত, গত ১ সেপ্টেম্বরের পরিপত্র অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা বিদ্যমান বা ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া নতুন কারিকুলাম থেকেই হবে। প্রশ্নগুলো হবে- সৃজনশীল ও  জ্ঞাননির্ভর, তবে হুবহু মুখস্থনির্ভর নয়। কিছু প্রশ্নে উদ্দীপক থাকবে, কিছু প্রশ্ন হবে উদ্দীপক ছাড়া। তারমানে পুরোপুরি কাঠামোবদ্ধ সৃজনশীল নয়। প্রশ্নের আইটেম হবে- প্রশ্নোত্তর, ম্যাচিং, বহুনির্বাচনী অর্থাৎ এমসিকিউ, কমপ্লিটিং, ব্যাখ্যাকরণ, কোনো বিষয়ের উপর সংক্ষিপ্ত নোট লেখা, একটি বিষয় কতোটা ভাল লেগেছে, কেন লেগেছে, কোন বিষয়ের উপস্থাপন ও পরিবেশন ঠিক আছে কিনা ইত্যাদি। 

জানা গেছে, প্রশ্নপত্র এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে তৈরি হচেছ, শীঘ্রই এই মডেল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। তারপর বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এখন নিয়মিত ক্লাস করা, উপরিল্লিখিত বিভিন্ন আইটেমের প্রশ্নের অনুশীলন করা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত। 

এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা তথা অংশীজনদের অভিমত, গবেষণা ও জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা ও নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার প্রকট অভাব ইত্যাদি নানাবিধ বাস্তব সমস্যা থাকায় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়।’ 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনাগুলো হলো- 

ক. প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে প্রাক-প্রাথমিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এবং ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ধারাবাহিকতা রেখে ইতোমধ্যে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির পাঠ্য পুস্তকগুলোর পাণ্ডুলিপি প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জন করে মুদ্রণ করা হবে। এক্ষেত্রে পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে। যতদূর সম্ভব মূল্যায়ন পদ্ধতি পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর মতো হবে।

খ. ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে চলমান পাঠ্যপুস্তকগুলো ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বহাল থাকবে। ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে যথাসম্ভব সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হবে। 

গ. ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের অবশিষ্ট সময়ে ও বার্ষিক পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদেরকে সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। উল্লেখ্য, শ্রেণি কার্যক্রমসমূহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির প্রতিটির ৬টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম অসম্পন্ন রয়েছে সেগুলো আর অনুষ্ঠিত হবে না। সংশোধিত ও পরিমার্জনকৃত মূল্যায়ন রূপরেখার ভিত্তিতে ডিসেম্বর নাগাদ ৬ষ্ঠ-৯ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত ও পরিমার্জিত মূল্যায়ন পদ্ধতির রূপরেখা শিগগিরই বিদ্যালয়সমূহে প্রেরণ করা হবে।

ঘ. ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা (২০২৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা) নেয়ার লক্ষ্যে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত রেখে পূর্বের জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ (অর্থাৎ ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত পুস্তক) শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে প্রণীত শাখা-বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা ভিত্তিক এই পাঠ্যপুস্তকসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে যাতে শিক্ষার্থীরা এক শিক্ষাবর্ষের মধ্যেই পাঠ্যসূচিটি সম্পন্ন করতে পারে। পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ অনুসারে পরিচালিত হবে।

ঙ. যে সব শিক্ষার্থী ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে তাদেরকে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২ এর আলোকে প্রণীত শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ (২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ব্যবহৃত) প্রদান করা হবে। এসব শিক্ষার্থী নবম ও দশম শ্রেণি মিলে দুই শিক্ষাবর্ষে সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।

চ. শিক্ষাবিদ, শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ, প্যাডাগগ, মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রশাসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চূড়ান্ত করা হবে, যা ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পরিপূর্ণরূপে কার্যকর করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002871036529541