স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি ও কিছু রাজনৈতিক দল অরাজকতা করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপির নেতারা তাদের কর্মীদের অগ্নিসন্ত্রাস করার উসকানি দিচ্ছে। তাদের কর্মসূচিতে সরকারের থেকে কোনও বাধা নেই। তবে আবার অগ্নিসন্ত্রাস করলে, জনদুর্ভোগ করলে আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, আজ বিএনপির নেতাকর্মীরা ছয়টি বাসে ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের ৩১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশের আহত সদস্যদের দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমানউল্লাহ আমানের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাকে আটক করা হয়নি। তিনি রাস্তায় পড়ে গিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বিএনপির ৭০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিএনপি ২০১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়েছিল। আজ সহিংসতার ঘটনার পর বিএনপি আবারও সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাচ্ছে কিনা, প্রশ্ন রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন ধরে অরাজকতা ও জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। গতকাল তারা একটি বড় কর্মসূচি দিয়েছিল এবং তার আগেও সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে জড়ো করেছিল।
রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি পালন করবে, এখানে সরকারের কোনও বাধা নেই। তবে যখন কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, জানমালের ক্ষতি করবে, কাউকে মারার চেষ্টা কিংবা হত্যা করবে অথবা গাড়ি ভাঙচুর করবে, তখন নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
গতকাল (শুক্রবার) দেখা গেছে, বিএনপির সমাবেশ থেকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবসময় দেখেছি পুলিশ কখনও তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পেছনে ফেরে না। নিহত হবে নাকি আহত হবে, এসব বিষয়ে পুলিশ ভাবে না। জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা তা দেখেছি। আজও পুলিশ বীরত্বের সঙ্গে সন্ত্রাস মোকাবিলা করেছে।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অগ্নিসন্ত্রাসের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে মানুষসহ জীবজন্তুরাও রক্ষা পায়নি। ওই অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে মানুষ বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা আজ (শনিবার) ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা নিয়েছিল। আমরা বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখেছি, তারা রাস্তায় অবস্থান করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে সব যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গেলে অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৩১ জন সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আরও কয়েকটি হাসপাতালে আহত কয়েকজন সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি মেহেদির ওপর বৃষ্টির মতো ঢিল ছোড়া হয়। কিন্তু তার বদলে যে একটা রিভেঞ্জ নেওয়া, সেটি কিন্তু তিনি বা পুলিশ করেনি। নীরবে তারা সহ্য করেছেন এবং আক্রমণকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করেছেন।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা ২০১৪-১৫ খ্রিষ্টাব্দে দেখেছি অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন একটি হাসপাতাল করতে। এত পরিমাণ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন, যে কারণে আলাদা একটি হাসপাতালই করতে হয়েছিল। আজকের ঘটনা আমাদের সেই স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেয়।
আবার তারা সেই প্রোগ্রাম নিচ্ছে কিনা, আবার ঢাকা অবরোধ করবে কিনা, আবার সেই অগ্নিসন্ত্রাসে ফিরে যাবে কিনা, আবার সেই মানুষকে জ্বালিয়ে-পুড়ে মারবে কিনা, প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
কর্মীদের অগ্নিসন্ত্রাস করার উসকানি দেওয়া প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কিছুক্ষণ আগে বিএনপির এক নেত্রী নিপুন রায়ের ফেসবুকের একটি অডিও শুনেছি। সেখানে তিনি বলছেন, ‘তোমরা আগুন ধরাও, এগুলো আমাদের দেখাতে হবে। জায়গা মতো দেখাতে হবে।’ জায়গাটা কোনটা, সেটা তিনি (নিপুন) নিজেই জানেন।
দাউ দাউ করে আগুন জ্বালানোর হুকুম তিনি দিচ্ছেন। সব জায়গা থেকে বিএনপির নেতারা এ ধরনের কাজের জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন। আমরা এটার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে, এটা যেমন সত্য, তেমনি আমি আহ্বান করবো, ২০১৪-১৫-তে যেভাবে জ্বলাও-পোড়াওয়ের নৃশংসতা ঘটিয়েছিল, তার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। এগুলো ঘটালে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ এই দেশের মানুষ আর এসব সহ্য করবে না।