বিকাশ ডিস্ট্রিবিউটর হাউজের আড়ালে চলছে মানিলন্ডারিং। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানি। সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এক বছরে ৪৬ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বুধবার চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। সিআইডি ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক কেএম রাকিবুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। শুক্রবার (৫ মে ) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদটি লিখেছেন সিরাজুল ইসলাম।
জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, অপেশাদার ডিস্ট্রিবিউটরদের ধরতে আমাদের একটি ডেডিকেটেড টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। যখনই কোনো সন্দেহজনক লেনদেন হয় তখন তা আমাদের সিস্টেমে ধরা পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই এসটিআর এবং এসএআর রিপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে পাঠাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানির সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি ছিল সেটা এরই মধ্যে বাতিল করেছি।
মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা হলেন, খোন্দকার আশফাক হোসেন কাদেরী, সুশান্ত নাথ, জালাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শিমুল উদ্দিন, আতিকুর রহমান, রাসেদুল হক রাসেল, মো. সজিব, শিকদার বনি আমিন, মেরাজুল ইসলাম, আবু খায়ের নয়ন, কামরুল হাসান মজুমদার, হারুন এবং মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানি লাইসেন্স নম্বর ১০৫৯৩০। এ ছাড়া মামলায় আরও অজ্ঞাত আসামি রয়েছে। আসামিদের মধ্যে আশফাক হোসেন কাদেরী হলেন মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানির কর্ণধার। সুশান্ত নাথ হলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানির মাধ্যমে এক বছরে ৪৬ কোটি দুই লাখ ১৭ হাজার ১২৫ টাকা পাচার হয়েছে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ আগস্ট থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ঢাকা থেকে আসামি জালাল হোসেনের হয়ে তার কর্মচারী শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী চার কোটি ৩২ লাখ ছয় হাজার ৮০০ টাকা, আতিকুর রহমানের হয়ে তার কর্মচারী বাবুল আহমেদ এক কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার, আব্দুল্লাহ আল নোমানের কর্মচারী ওমর ফারুক এক কোটি ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ও মানিক মিয়া ৬২ লাখ ৫০ হাজার, রাসেদুল হক রাসেলের কর্মচারী ওমর কাইয়ুম ৩৫ লাখ, সজিবের হয়ে তার কর্মচারী ওমর কাইয়ুম ৫৮ লাখ, আসামি শিমুল উদ্দিন এক কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার এবং শিকদার বনি আমিন এক কোটি ছয় লাখ মেরাজুল ইসলাম ১১ কোটি ৬৬ লাখ জমা ওই প্রতিষ্ঠানে জমা দেন। এছাড়া মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে মোহাম্মদ মাসুদ মীরের হয়ে তার কর্মচারী উজ্জ্বল মিয়া ২৬ লাখ, আশরাফুল আলমের হয়ে কর্মচারী সাজ্জাত হোসেন তিন কোটি চার লাখ, আলাউদ্দিন আবিদ ৫০ লাখ ৫০ হাজার, রাহাত কবিরের হয়ে কর্মচারী সুবর্ণ আহমেদ ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টাকা জমা করেন। এই টাকাগুলো জমা হয় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোড শাখায়। পরে টাকাগুলো তুলে পাচার করা হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের আন্দরকিল্লা শাখায় ৩৫৭ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালাল হোসেনের কর্মচারী শাহাদাত হোসেন এক কোটি ৯৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টাকা, কর্মচারী এনামুল হক তিন কোটি ৫৪ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৫, আসামি কামরুল হাসান মজুমদার তিন কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার টাকা, সৌদি প্রবাসী আসামি হারুনের হয়ে কর্মচারী আবুল এহসান চার কোটি ৬১ হাজার ৯২৫ টাকা এবং একরাম উদ্দিন করিম তিন কোটি ৬৬ লাখ ১১ হাজার ৬৩৫ টাকা জমা করেন।
সিআইডির অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে সিটি ব্যাংক লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখায় মেসার্স আল কাদের অ্যান্ড কোম্পানি ১৮০ দশমিক ৩৩ কোটি টাকা জমা ও উত্তোলন করেন। এর মধ্যে আসামি আবুল খায়েরের হয়ে কর্মচারী জাকির হোসেন এক কোটি ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৪০ টাকা এবং ইব্রাহিমের (বর্তমানে মৃত) কর্মচারী মাইন উদ্দিন এক কোটি ১২ লাখ ৯৬ হাজার জমা করা হয়। পরে পুরো টাকা পাচার করা হয় বলে সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।