৭ মার্চ জাতীয় দিবস ও ১৫ আগস্ট শোক দিবস বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে এসে মারধরের শিকার হয়েছেন ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনের কর্মীরা। পিটুনির শিকার হয়েছেন দশম বেতন স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচিতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা। এ সময় একদল যুবক এসে লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন।
আহতদের মধ্যে বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠনের মুখপাত্র কুতুব হিলালীসহ চারজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সংগঠনের এক কর্মী বলেন, আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিল করতে থাকলে আমাদের উপর আক্রমণ করে। এতে আমাদের অন্তত ২০-২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন মাঠে নামে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে।
সরকার সম্প্রতি আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে জাতীয় দিবসটি হাই কোর্টের আদেশে পালন হওয়া শুরু হয়।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দিনটি ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে এই দিবসটি বাতিল করে।
২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন হওয়া শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার এই দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করেছিল।
বাতিলের খাতায় আছে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হওয়া জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলের জন্মদিনে শেখ রাসেল দিবস।
১৯৭২ এর ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের দিনটি জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পালন না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আজ বিক্ষোভ সমাবেশে শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, প্রেস ক্লাবের উল্টোপাশ থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক বাঁশ ও কাঠের লাঠিসোঁটা নিয়ে দৌড়ে আসেন। মিছিলকারীদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেন তারা।
ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মী হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডাররা হামলা চালায়। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন। যার মধ্যে চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই সময় সেখানে শিক্ষকদের কর্মসূচি ছিলো। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যায়, একজনকে লাঠি হাতে ধাওয়া করা হচ্ছে। এরপর তাকে প্রেস ক্লাবের সীমানা প্রাচীরে গ্রিলে ঠেসে ধরে কিল ঘুসি মারা হয়।
পরে সেই ব্যক্তি নিজেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ আলী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমাকে চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ বলে লাঠিপেটা করা হয়েছে। আমার মোবাইলটা নিয়ে গেছে। আমি এর বিচার চাই ভাই। আমার মোবাইলটা নিয়ে গেছে ভাই. আমার মোবাইলটা নিয়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে কেন মারছে জানি না, আমি বারবার বলছি, আমি টিচার, আমি টিচার। তাও আমার ওপর নির্যাতন করেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ত্রয়োদশতম গ্রেডে বেতন পান, যা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সমমর্যাদার। এই শিক্ষকরা বহু বছর ধরেই তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি দশম গ্রেডে বেতনের দাবি জানাচ্ছেন।
এই দাবি বাস্তবায়নে গঠন করা সংগঠন ‘শিক্ষক সমাজের’ সভাপতি মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় কিছু লোক আক্রমণ করে। এতে আমাদের একজন শিক্ষক আহত হন। আমরা তাকে তার বাড়িতে দেখতে যাচ্ছি।