ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিচার না পেলে প্রক্টর অফিসের সামনে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করার হুমকি দিয়েছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর কাছে হামলার বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্রলীগ নৃশংস হামলা চালিয়েছে। আমি একটি ছাত্র সংগঠনের নির্বাচিত সভাপতি, আমার গায়েও তারা আঘাত করেছেন। যে আঘাত এখনো আছে, যারা হামলা করেছে তাদের সবার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। আমরা প্রক্টর স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এক সপ্তাহের মধ্যে এ হামলার বিচার চেয়েছি। প্রক্টর আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা যে হামলার শিকার হয়েছি, যদি তিনি বিচার না করেন, আমি সংগঠনের সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হিসেবে এই প্রক্টর অফিসের সামনে এসে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করবো। বারবার মার মার খেয়ে বিচার না পেয়ে মরার চেয়ে নিজেই নিজেকে মেরে ফেলা ভালো।
অভিযোগপত্রে বিন ইয়ামিন মোল্লা উল্লেখ করেন, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্র অধিকার পরিষদের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎযাপন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির গেটে উপস্থিত হই। সংগঠনের নেতাকর্মীসহ টিএসসির গেটে উপস্থিত হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের টিএসসিতে প্রবেশে বাধা দেন। আমরা অনেক অনুরোধ করার পরও তারা সরে যাননি। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। বেলা আনুমানিক পৌনে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তারা রাস্তার মাঝখানের সিমেন্টের তৈরি কংক্রিটের ডিভাইডার ব্লক (গার্ডার) ফেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইউনুস সানির পা ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমিসহ আমার সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আখতার হোসেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির ফয়সাল, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ফয়সাল রকিসহ ২৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে রাস্তায় ফেলে গুরুতর জখম করেন। এছাড়াও মিলন চত্বরে পুলিশের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে নারকীয় হামলা চালান, যা বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম গুলোতেও প্রচারিত হয়।
জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৮০ থেকে ১০০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আমাদের ওপর এই নারকীয় হামলায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। জাতীয় গণমাধ্যম ও বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে যা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এই হামলার মাধ্যমে সংবিধানে দেয়া চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে চলেছে। ছাত্রলীগের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে ক্যাম্পাসে সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নষ্টসহ শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। ছাত্রলীগের হামলার নেতৃত্ব দেয়া ও হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, হামলাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রক্টর স্যারের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হবে।
অভিযোগপত্র দেওয়ার সময় প্রক্টর অফিসে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।