২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রিপাবলিকান পার্টির দাতা ও শতকোটিপতি হারলান ক্রোর কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আসছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস। হারলান ক্রোর সৌজন্যে অবকাশ যাপনে গেছেন বিলাসবহুল গন্তব্যে। কখনও ক্রোর দামি প্রমোদতরিতে, কখনও বা তাঁর ব্যক্তিগত জেটে চড়ে দূরদূরান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সঙ্গ নিয়েছেন ক্রোর প্রভাবশালী বন্ধুবান্ধবদের, থেকেছেন শতকোটিপতি ক্রোর ব্যক্তিগত অবকাশযাপন কেন্দ্রে।
ক্রোর বদান্যতার সীমা কতদূর ছড়িয়েছিল সেটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ‘ক্লারেন্স থমাস অ্যান্ড দ্য বিলিয়েনেয়ার’ জোশুয়া কাপলান, জাস্টিন এলিয়ট ও অ্যালেক্স মিয়ারজেস্কির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সূচনা ছিলো এই।
প্রোপাবলিকার করা ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোর প্রথম পর্ব যুক্তরাষ্ট্রে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আচরণবিধির তদারকিতে যে দুর্বলতা রয়েছে তা উন্মোচন করে দেয়।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বিচারপতিদের কেউ কেউ প্রভাবশালী ও ধণাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে মূল্যবান উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন, অবকাশযাপনে বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়িয়েছেন। এই ধারাবাহিকে পর্দার আড়ালে বিচারপতি ও ধণাঢ্য ব্যক্তিদেরও যে যোগাযোগ তা ফাঁস করে দেয় প্রোপাবলিকা।
এ ধরনের প্রতিবেদনের দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। ফলশ্রুতিতে উচ্চ আদালত দ্রুতই অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ঐতিহাসিক উদ্যোগ নেয়।
ধারাবাহিকটি শুরু হয়েছে বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস ও শতকোটিপতি আবাসন ব্যবসায়ী হারলান ক্রোর সুসম্পর্কের গল্প দিয়ে।
জশুয়া কাপলান, জাস্টিন এলিয়ট ও অ্যালেক্স মিয়ারজেস্কি জানাচ্ছেন, এই দুই ব্যক্তির পরিচয় হয়েছিল তিনদশক আগে।
প্রোপাবলিকার করা এ অনুসন্ধানের আগ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে নীতিনৈতিকতা বিষয়ক আচরণবিধি (এথিক্যাল কোড অব কনডাক্ট) ছিলো না।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে আদালতের জুন অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই থমাস ও তার স্ত্রী ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমান।
প্রতিবেদনে রিপোর্টাররা এই ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন এভাবে, ‘একজন ব্যক্তিগত বাবুর্চি ও একদল কর্মচারীসহ একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে (সুপারইয়ট) করে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপপুঞ্জে তিনি ঘুরে বেড়ান। কোনো একসময়ে সাগরের নিচে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের উৎপত্তি। তাঁদের এই ভ্রমণের মেয়াদ ছিল নয়দিন।’
এককভাবে একটি প্রমোদতরি কিংবা উড়োজাহাজ ভাড়া নিলে খরচ পড়বে অর্ধ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তবে প্রতিবেদকেরা জানাচ্ছেন, কোনো কিছুর জন্যই থমাসকে কানাকড়ি দিতে হয়নি। বরং তাঁর হয়ে অর্থ পরিশোধ করেছেন ক্রো।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিবছর ক্রোর পৃষ্ঠপোষকতায় এ ধরনের ব্যয়বহুল অবকাশযাপন করেছেন থমাস।
প্রতিবেদনটি বলছে, ‘ক্রোর সঙ্গে থমাস ক্যালিফোর্নিয়ার বোহেমিয়ান গ্রোভ পরিদর্শনে যান। বছরে একবার বিশ্বের বিশিষ্ট অভিজাত ও প্রভাবশালী পুরুষেরা দুই সপ্তাহের জন্য বোহেমিয়ান গ্রোভে আসেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় এ ধরনের বিশেষ আয়োজনে অংশগ্রহণ ছাড়াও পূর্ব টেক্সাসে ক্রোর বিশাল খামারে তিনি সময় কাটান। সাধারণত প্রতি গ্রীষ্মে উত্তর-পূর্ব নিউ ইয়র্কের অ্যাডিরনড্যাকে ক্রোর ব্যক্তিগত অবকাশযাপন কেন্দ্রে থমাস এক সপ্তাহ থাকেন।
এ ধরনের সফরের অর্থ হচ্ছে, ভেরিজন অ্যান্ড প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্সসহ ক্ষমতাবান কর্পোরেট মুঘল থেকে শুরু করে লিওনার্ড লিওর মতো রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে থমাসের ওঠাবসা ছিলো।
প্রোপাবলিকা জানাচ্ছে, ফেডারেলিস্ট সোসাইটির নেতা লিওনার্ড লিও সুপ্রিম কোর্টকে ক্রমশ রক্ষণশীল দক্ষিণপন্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম কারিগর।
নীতিশাস্ত্র বিশেষজ্ঞসহ চারজন ফেডারেল বিচারপতি বলেন, অবকাশযাপনের এ ধরনের সুবিধা নিয়ে থমাস বিচারকদের দীর্ঘদিনের চর্চিত আচারণবিধি ভঙ্গ করেছেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভ্রমণসংক্রান্ত তথ্যগুলো থমাস তাঁর বার্ষিক আর্থিক বিবরণীতে তালিকাভুক্ত করেননি। যদিও নিয়ম অনুসারে ৪১৫ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার প্রাপ্তির কথা নথিবদ্ধ করার কথা।
প্রতিবেদকেরা এ বিষয়ে দুইজন নীতিশাস্ত্র বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছেন। যাঁরা মনে করেন ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে ভ্রমণের তথ্য প্রকাশ না করে থমাস ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি পরবর্তী প্রবর্তিত আইনের লঙ্ঘন করেছেন।
এ আইন অনুসারে বিচারপতি, বিচারক, কংগ্রেসের সদস্য এবং ফেডারেল কর্মকর্তাদের উপহারপ্রাপ্তির তথ্য প্রকাশের বিধান রয়েছে। (সংক্ষেপিত, গ্রোবাল ইনভেস্টিগেটভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক থেকে)