পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যখন রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাত চলছে ঠিক সেই সময়ই অভাবনীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল কর্ণাটক হাইকোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন। এই প্রথম শিক্ষাবিদ না হওয়া সত্ত্বেও একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করা হল। একই সঙ্গে তাঁকে ‘শান্তি ও সামাজিক সংহতি কমিটি’ গঠন করে তার শীর্ষে বসানো হয়েছে।
বুধবার (৫ জুলাই) রাতে রাজভবনের তরফে এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, ‘শান্তি ও সামাজিক সংহতি কমিটি’ গঠন করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন কলকাতা হাই কোর্টের সাবেক বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হতেও রাজি হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। রাজভবনের টুইট বার্তায় আরও বলা হয়েছে, নবনিযুক্ত কমিটি ছাত্র সমাজের মধ্যে, বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্ম ও রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় সহিংসতা কি বিরুপ প্রভাব ফেলছে তা পর্যালোচনা করবেন।
উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল তথা আচার্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই নিয়োগ দিচ্ছেন বলে আপত্তি জানানো হয়েছে বারে বারে। শিক্ষা যুগ্ম তালিকায় থাকার সূত্রে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নির্ধারিত যোগ্যতামান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপালের এই পদক্ষেপে রাজভবনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত আরও তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা মহলের একটি বড় অংশ। অবশ্য সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে অন্তবর্তী উপাচার্য ছিলেন নির্মাল্যনারায়ণ চক্রবর্তী। গত ৮ জুন তার মেয়াদ শেষ হবার পর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন ছিল।
নবনিযুক্ত উপাচার্য সাবেক প্রধান বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের স্নাতক। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কর্ণাটক হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে কর্ণাটক হাইকোর্টের স্থায়ী প্রধান বিচারপতি করা হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসর নেন।
উপাচার্য নিয়োগ যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য গত বছরই রাজ্য সরকার আ্ইন করে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেই আইনে রাজ্যপাল নিয়মমত সম্মতি দেননি। তবে সরকারের সঙ্গে আচার্যের বিরোধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ও ছাত্র্রদের পঠনপাঠনের সংকট তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।