বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন হচ্ছে

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর একটি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় অবশেষে উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে আইন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় আলোচনা হয়েছে বলে সভার একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বিচারপতি নিয়োগে যোগ্য ও দক্ষদের বাছাই করার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার জন্য স্বাধীন নিয়োগ কমিশন আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। কয়েকজন বিচারপতি তখন আলোচিত উচ্চ আদালতে নিয়োগের প্রক্রিয়ার কথাটি তুললে প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।

এখন বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পূর্বসূরি ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দুই দেশের আদলে কমিশনে কারা থাকবেন, কমিশন কীভাবে নিয়োগের জন্য বিচারক বাছাই করবে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখার কাজ চলছে। সবকিছু চূড়ান্ত হলে প্রধান বিচারপতির নির্দেশমতো দ্রুত তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে বিচারপতিদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আইনজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নানা রকম অভিমত দিচ্ছেন।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর শেষ কর্মদিবসের বিদায়ী সংবর্ধনায় বলেছিলেন, বিচারপতি নিয়োগে আইন করা অপরিহার্য। তা হলে বিচারপতি নিয়োগের কাজটি আরো স্বচ্ছ ও দ্রুত হবে এবং জনগণের মধ্যে বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতা সম্পর্কে ‘ভিত্তিহীন ধারণা’ দূর হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দুই দিন পরই নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

প্রধান বিচারপতি গত ২০ সেপ্টেম্বর অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেয়া অভিভাষণে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। বিচারিক আদালতের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত দেশের প্রথম সংবিধানেই বিচারপতি নিয়োগে আইন করার কথা বলা হয়েছিল। তবে আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও বিচারপতি নিয়োগে আইন করা হয়নি।  

আইনজ্ঞরা বলছেন, শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থার জন্য পৃথক সচিবালয় ও বিচারপতি নিয়োগের আইন থাকা জরুরি। এত দিন রাজনৈতিক সরকারগুলো তা করেনি। তাই বর্তমান নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আইনটি করা হবে বলে আশা তাঁদের।

বিচারপতি নিয়োগে আইন না থাকায় ৪ নভেম্বর এক আলোচনা সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

তিনি বলেন, ‘নিম্ন আদালতে বিচারক নিয়োগের সময় তৃতীয় শ্রেণি হলে আবেদন করতে পারবেন না, মেধাবী দরকার। তাঁরা জেলা জজ হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টে আসেন বিচারপতি হয়ে। আর এখানে (উচ্চ আদালতে) দল করলেই হয়। কারণ আইন নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘সংবিধানে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণে আইন করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এত দিনেও কোনো আইন করা হয়নি। আইন করা হয়নি বলেই ইচ্ছেমতো অযোগ্য লোকজনকেও বিভিন্ন সময় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মেধার চেয়ে দলীয় আনুগত্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে কারণে বিচার বিভাগের আজ এ দশা। তাই অবিলম্বে আইন করে বিচারকদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা দরকার। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ কমিশন গঠন করা খুবই জরুরি।’

সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতার বিষয়ে ৯৫ অনুচ্ছেদের ২(ক)-তে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে কমপক্ষে ১০ বছর আইনজীবী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। (খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ১০ বছর বিচার বিভাগীয় পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং (গ)-তে বলা হয়েছে, আইনের দ্বারা নির্ধারিত যোগ্যতা না থাকলে তিনি নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।

কিন্তু আইন-নির্ধারিত যোগ্যতার কথা বলা হলেও সে আইনই করা হয়নি।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগে নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছিলেন। ওই বছরের ৬ জুন ওই রিটের প্রাথমিক শুনানিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুল নিষ্পত্তি করে আদালত যে রায় দেন, তাতে বিচারপতি নিয়োগের যোগ্যতার বিষয়ে সাত দফা পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়।

রায়ে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে কোনো ব্যক্তির বয়স ন্যূনতম ৪৫ বছর হতে হবে। বিচারকদের ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা আদালতে কমপক্ষে তিন বছরের বিচারিক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দেশের রাষ্ট্রীয় চার মূল নীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর আস্থা থাকতে হবে। সুপারিশ করা ব্যক্তির শিক্ষাজীবনে খুব ভালো ফল, সমৃদ্ধ পেশাগত দক্ষতা, আইনগত বিচক্ষণতা ও কাজে একাগ্রতা থাকতে হবে। এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে প্রকাশিত হয়।

বিচারপতি নিয়োগে আইন করার উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের অ্যাজেন্ডায় আছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনই চূড়ান্ত কিছু করা হয়নি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029258728027344