শুধু অতি ইসলামপন্থি আলেমরা নন, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন সাহেবও বলে ফেললেন-, ‘জাতিকে ধর্মহীন নাস্তিক করার জন্য মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকার পৌত্তলিক ও নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে আমাদের মুসলমানদের ঈমান ও আকিদায় হাত দিয়েছে।‘
মিলন সাহেবরা কিংবা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানারা যতোই আধুনিক গণতান্ত্রিক লেবাস পরিধান করুক না কেন, আসলে তারা রাজনৈতিক বিশ্বাসে প্রচণ্ড গোঁড়া। মূলতঃ তারা ধর্মান্ধতা দিয়েই আওয়ামী লীগকে তাড়াতে চান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চান।
বিএনপি দলটির রাজনৈতিক চরিত্র হলো, It is an umbrella for terrorist groups, violent fundamentalist parties, islamist politics. It is the cocoon of most dangerous killing politics & militant politics.
ইদানিং অদ্ভূত আজগুবি বয়ান কিছু মৌলভিরা করছেন। যেমন- করোনা মহামারির সময় মাওলানা কাজী ইব্রাহীমের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি দাবি করছেন, তিন ঘণ্টার একটা ইন্টারভিউয়ে তার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের কথা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে করোনার পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করে বলেছে, বাংলাদেশে তাদের বড় আক্রমণের পরিকল্পনা নেই। তবে দেশে যারা ইসলামবিরোধী আছে তাদের ছাড়বে না। করোনা ওই বক্তাকে বলেছে, বাংলাদেশের ভারতীয় ‘অসভ্য’ চ্যানেল যেন ডিসকানেক্ট করে দেয়। যদি না দেয় তাহলে দেশটিতে তারা আক্রমণ করবে।
আরেকটি ভিডিওতে মুফতি এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো ভাইরাস বিশ্বাস করি না। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাসূল (সা.) এর একটি হাদিসে আছে পাখির ডাকে শুভ-অশুভ বলে কিছু নাই, আর সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছু নাই।
এর বাস্তবতা তুলে ধরে এ বক্তা আরো বলেন, যদি একজনের ভাইরাস আরেকজনের শরীরে যেত, তাহলে আফ্রিকার জঙ্গলে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস করতেছে, তাদের একজনও তো বাঁচার কথা ছিলো না। কমলাপুর রেলস্টেশনের বস্তিতে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করছে, এদেরকে ভাইরাস ধরে না কেন? এরা তো নর্দমার পাশে থাকে। বরং যারা এসিতে থাকে, স্প্রিংয়ের খাটে ঘুমায় আর রোস্ট খায়, সব সংক্রমণ এদেরকে ধরে কেন? সুতরাং বুঝা যায়, যার কপালে রোগ আছে তাদেরকেই ধরবে, আর যার কপালে রোগ নাই তাদেরকে ধরবে না। সুতরাং কোনো সংক্রমণ-অসংক্রমণ কাউকে ধরতে পারে না।
করোনার প্রকোপ বাড়ার পর জনসমাগম এড়াতে ওয়াজ, মিলাদ-মাহফিল ও জামাতে নামাজ পড়া এড়িয়ে চলার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এটা নাকি রাব্বুল আলামিনের বিধিবিধান না মানার শামিল। কিছু বক্তা এসব নির্দেশনা না মানার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
মাওলানা সিফাত হাসান ও ইয়াহিয়া তাকি নামের দুজন ইসলামী বক্তা করোনা ভাইরাস নিয়ে বয়ানে করোনাকে চীনাদের জন্য আল্লাহর পাঠানো ‘গজব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মধ্যে মাওলানা তাকি বলেছেন, ‘চীন পারে নাই। বাংলাদেশ সরকার কোনোভাবেই কোনো প্রস্তুতি নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিহত করতে পারবে না। একমাত্র পথ তওবা করা'। মাওলানা সিফাত হাসান বলেন, "বাংলাদেশের সরকার যতই প্রস্তুতি নিক, ডাক্তার আর সচেতনতা দিয়ে এই আজাব-গজব থেকে বাঁচা যাবে না"।
এমনি আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে তথাকথিত হুজুরদের। এরা বিজ্ঞান বুঝতে রাজী নন। তারা চান, অনুজীব নিয়ে গবেষণা, সংক্রমণকারী ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী কোনো উদ্ভাবন কিংবা এ সমস্ত সংক্রমণ নিয়ে কোনো টিকা আবিষ্কার করা না হোক। বলা হচ্ছে, এগুলো কাজে আসবে না! ফসিল বা জীবাশ্ম বা জীবের কংকাল নিয়ে ল্যাবরটরিতে গবেষণা করা এবং গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী কোন্ কংকালটি কোন্ জীবের এবং এই প্রাচীন জীবটি পৃথিবীতে কখন ছিল তা আবিষ্কার করা যাবে না, বলা যাবে না।
মানুষের শ্রেণিবিন্যাস হলোঃ পর্ব: Chordata; উপপর্ব: Vertebrata; শ্রেণি: Mammalia; বর্গ: Primate; গোত্র: Hominidae; গণ: Homo; প্রজাতি: Sapiens।
হোমিনিডি গোত্রের অস্ট্রালোপিথেকাস নিয়ে এবং হোমো গণের 'হোমো হ্যাবিলিস' কিংবা 'হোমো ইরেক্টাস' এবং সবশেষ 'হোমো স্যাপিয়েন্স' মানুষ নিয়ে বিজ্ঞানের আবিষ্কার সম্বন্ধে কিছুই বলা যাবে না? তাহলে বিজ্ঞান পড়া যাবে না? এরা বিজ্ঞান পড়া নিষিদ্ধ করে দিতে চায়?
লেখক : অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব