বিয়ানীবাজারের চারখাই উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী রয়েছে। ব্যবহারিক চর্চার জন্য রয়েছে একটি বিজ্ঞানাগার কক্ষও। কিন্তু সেখানে নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। যা দু-একটি যন্ত্রপাতি আছে, তাও দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কক্ষটিতে বেশির ভাগ সময় তালা দেওয়া থাকে। গত সপ্তাহে বিয়ানীবাজার উপজেলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগার সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
চারখাই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রশীদ জানান, ১৯৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী আছে ৮৭৬ জন। এদের মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছে ৭০-এর কাছাকাছি শিক্ষার্থী। এই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। যন্ত্রপাতির অভাব সত্ত্বেও কীভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস হয় এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনোমতে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানাগার নিয়মিত খোলা হয় কি-না এমন প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না।
উপজেলার মুড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব মুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার আছে। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যা অতি নগণ্য। ৫০৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ম ও ১০ম শ্রেণি মিলিয়ে মাত্র ৩১ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ আহমদ জানান, বিজ্ঞানাগারে মোটামুটি সরঞ্জাম আছে। তবে রাসায়নিক দ্রব্যাদি অনেক সময় পাওয়া যায় না। সরকারের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক একাডেমিক সুপারভিশন (শিক্ষাবিষয়ক পর্যালোচনা) প্রতিবেদনের তথ্যে উঠে এসেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারই নেই। আবার বিজ্ঞানাগার থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা ব্যবহৃত হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এখন ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই এই বিষয়ের নম্বর পাওয়া যায়। ফলে ব্যবহারিক বিজ্ঞানশিক্ষার চর্চা ঠিকমতো হয় না।
পৌরশহরের পিএইচজি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৬৩৮ জন। নবম ও দশম শ্রেণি মিলিয়ে প্রায় ৯০ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগারের অবস্থা ভালো নয়। মূলত বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানোর শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক কিছু যন্ত্রপাতি আছে। তবে বহু বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারে যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল হেকিম।
উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে বিজ্ঞান ভবন কিংবা বিজ্ঞানাগার নেই। দুবাগের আইডিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মূল ভবনের একটি কক্ষকে বিজ্ঞানাগার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কক্ষের ভেতরে দুটি আলমারির ভেতর কিছু যন্ত্রপাতি আছে। আর কিছু কার্টনভর্তি অবস্থায় পড়ে আছে।
কুড়ার বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারের অবস্থা খুব দুর্বল। গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞানাগারের কক্ষের দরজার তালায় মরিচা পড়েছে। বিজ্ঞানাগারে বেশিরভাগ যন্ত্রপাতি নেই। বৈরাগীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই । শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার আছে, তবে যন্ত্রপাতি খুব বেশি নেই। এছাড়া বিজ্ঞানে পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহও কম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাউতা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, বিজ্ঞানাগারে যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। এ কারণে ব্যবহারিক ক্লাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌলুদুর রহমান বলেন, উপজেলার মোট ৪৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭টিতে বিজ্ঞানাগার আছে। সবগুলোই মোটামুটি সচল বলে তিনি দাবি করেন। বিজ্ঞানাগার সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযাগ করা হবে। যন্ত্রপাতির সংকট দূর করতে তহবিল লাগবে। বিজ্ঞানাগার থাকলে আলাদাভাবে যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যাবে বলে জানান তিনি।