বিতর্কহীন থাকতেই দুই বই প্রত্যাহার : এনসিটিবি সদস্য

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ভুলত্রুটির জন্য নয়, বিতর্কহীন থাকা এবং সহনশীল পরিস্থিতির জন্যই চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বইয়ের পাঠদান প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে  চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয় ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটির পাঠদান প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে ‘বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমবিষয়ক অপপ্রচার বন্ধ হোক’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনেকটা আকস্মিকভাবেই ওই দুটি বই প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলো এনসিটিবি। তবে, কী কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিলো তার ব্যাখ্যা সেদিন দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনের বছরে মূলত ‘রাজনৈতিক কারণেই’ সরকার বই দুটি প্রত্যাহার করে নেয়।

প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এনসিটিবির সদস্য মো. মশিউজ্জামান জানান, প্রত্যাহার হওয়া বই দুটিতে ভুলত্রুটি আছে বলে তারা মনে করেন না। তবে বানান ভুল থাকতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা সবার কাছে বিতর্কহীন থাকার চেষ্টা করেন। রাষ্ট্রও চায় সবার কাছে একটি সহনশীল পর্যায় থাকুক। সে রকম অবস্থায় তারা বিবেচনা করেছেন, এই দুটি পাঠ্যবই যদি প্রত্যাহারও হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে না।  তবে এটি থাকলে হয়তো আরেকটু সহায়তা করতো।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার এবং অপপ্রচার নিয়ে মশিউজ্জামান আরও বলেন, গত ৩ জানুয়ারির পর তারা একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান। তারা লক্ষ্য করেছেন, নির্বাচনের আগের বছরে এগুলো (অপপ্রচার) বেশি করা হয়। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দেও অপপ্রচার হয়েছে। এবারের অপপ্রচার মাত্রাহীন এবং মিথ্যা প্রচারণায় ভরপুর ছিল। তাদের পক্ষ (সরকার ও এনসিটিবি) থেকে এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা ছিল।

এ সময় আক্ষেপ করে আজকের আলোচনার আয়োজকদের উদ্দেশে মশিউজ্জামান বলেন, তখন একটু অসহায় বোধ করেছি, তখন আপনারা কেউ আমাদের পাশে ছিলেন না। 

অবশ্য আলোচনায় অংশ নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ‘পাশে না থাকার’ কথাটুকুতে দ্বিমত করেন। এ সময় সরকারের অবস্থান ‘সাপ হয়ে দংশে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে’–এর মতো বলেও মন্তব্য করেন শাহরিয়ার কবির।

গত ১০ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অনুসন্ধানী পাঠ পাঠ্যবই দুইটি পাঠদান থেকে প্রত্যাহার করে এনসিটিবি। 

জানা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাসের বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাবার নামে ভুল করা হয়েছিলো। শেখ বাদ দিয়ে শুধু লেখা হয়েছে লুৎফর রহমান। এছাড়া আরও ১৮টি অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ছেলেবেলার ‘মুজিব’ শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারি অফিসের কেরানি। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। পদটি আজও দেশের সব জেলা জজ আদালতে বহাল আছে।

এছাড়া ওই বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় ‘ভাষা আন্দোলন’ শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়নি। একই বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও বাঙালি, হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও বাঙালী দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে বাঙ্গালি। এ বইতে ‘বানর থেকে মানুষ এসেছে' বলে উল্লেখ আছে দাবি করে অপপ্রচার চালানো হলেও প্রকৃত পক্ষে বলা ছিলো, বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি। 

সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় ‘রাজনৈতিক সংযোগ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, তোমরা তো জানো ২৫ মার্চ মধ্যরাতে নিজ বাড়িতে গ্রেফতার বরণ করার আগে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম যেন এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেন। বইটিতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার বরণ করেছেন, অর্থাৎ স্বেচ্ছায় গ্রেফতার হয়েছেন। এই শব্দটি প্রথম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন খালেদা জিয়া!

এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দেও কওমি মাদরাসাভিত্তিক একটি সংগঠনের চাওয়া অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন আনা হয়েছিলো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004033088684082