বিদেশ সফরের ৩ শতাধিক জিও বাতিল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একের পর এক বাতিল হচ্ছে সরকারসংশ্লিষ্টদের বিদেশ সফরসংক্রান্ত জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার)। সোমবার পর্যন্ত বাতিল হয়েছে তিন শতাধিক। বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কৃচ্ছ সাধনের অংশ হিসাবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন আগেই জারি হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

ওই প্রজ্ঞাপনে একধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে-এমন অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তাদের মতে, ভিসা, হোটেল বুকিং, বিমান টিকিটসহ যারা সব প্রস্তুত করে ফেলেছেন, তারা কী করবেন-এই প্রশ্ন অনেকের। কেউ বলছেন, বিদেশ ভ্রমণ বন্ধে পরিপত্র প্রকাশের আগে জারি করা সরকারি আদেশ (জিও) অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণে সমস্যা নেই।

অন্যদিকে পরিপত্র জারির আগের জিওতেও বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করেছে সরকার। এ কারণে পরিপত্রের বিষয়টি নিয়ে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সব বিদেশ সফর সীমিত করতে বৃহস্পতিবার পরিপত্র জারি করেছে সরকার। অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অধিশাখা থেকে জারি করা পরিপত্রে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনারসহ সব ধরনের বিদেশ সফরের বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।

পরিপত্র অনুযায়ী, ঠিক কোন তারিখ থেকে এবং কী কী কারণে বিদেশ সফর যাওয়া যাবে না, কোন কোন ক্ষেত্রে যাওয়া যাবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জারি করা পরিপত্রের আলোকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এ ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে নির্দিষ্টভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

একাধিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানিয়েছেন, সাধারণত সরকারি কোনো পরিপত্রে সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না থাকলে পরিপত্রটি যে তারিখ থেকে জারি হয়, সেই তারিখ থেকেই কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হয়। বিদেশ সফরসংক্রান্ত পরিপত্রের ক্ষেত্রেও তারা সেটাই ভাবছেন।

অন্যদিকে পরিপত্র জারির আগে প্রকাশ হওয়া বিদেশ সফরের জিও বাতিলের মাধ্যমে উল্লিখিত যুক্তিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কাতারে বাংলাদেশ রোড শোতে যোগ দিতে রেলমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বিনিয়োগ উপদেষ্টা, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রসহ একাধিক সচিব, সিনিয়র সচিবের একটি সফর এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে। তাদের কাতারে যাওয়ার জন্য জিও জারি করা হয়েছিল ৮ মে। অর্থাৎ বিদেশ সফর বন্ধ করে যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, এর থেকে চার দিন আগে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, কাতারের রোড শোতে ১৭০ জনের যাওয়ার কথা ছিল।

এই প্রতিনিধি দলের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খরচের প্রতিনিধিরাই ছিলেন। তাদের সবার সফরই বাতিল করা হয়েছে। তাই যারা পরিপত্র প্রকাশের আগের জিও বা বেসরকারি অর্থায়নে বিদেশে গেলে সমস্যা হবে না ভাবছেন, তাদের যুক্তি অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে জারি করা পরিপত্রটি খুবই কঠোর। এই বার্তাটি সবার গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, সবার বিদেশ সফর বন্ধ করতেই এখানে বলা হয়েছে। যদি কোনো বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিষয় জড়িত থাকে, সেটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে যেতে পারে।

একটি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের থাইল্যান্ড সফর ছিল বিদেশি অর্থায়নে। তার ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গেলে সফরে যাওয়ার অনুমতি মেলেনি। এ কর্মকর্তা বলেন, অনুমোদন না হয়ে ভালোই হলো। আগে অনুমোদন থাকলেও পরিপত্র জারির পরিপ্রেক্ষিতে আমি যেতাম না।

কারণ, বিদেশ সফরের নামে যে ধরনের কার্যক্রম এখন শুরু হয়েছে, তা সত্যিই লজ্জার। তিনি বলেন, আমি গত কয়েক বছরে কোনো সফরে যাইনি। এটি বিদেশি অর্থায়নে হওয়ায় যেতে রাজি হয়েছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, একটি দেশের শীর্ষপর্যায়ের সরকারি কর্মচারীরা যদি পুকুর কাটা, খিচুড়ি ব্যবস্থাপনা দেখা, মেলা দেখতে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ তৈরি করেন, তাহলে সেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যাই হোক, ভবিষ্যৎ যে ভালো না তা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়। অন্যদিকে সম্পূর্ণ বিদেশি অর্থায়নে হওয়ায় একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, সচিবসহ প্রায় ১০ জন কর্মকর্তার চলতি সপ্তাহের শেষদিকে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এই সফরের তালিকায় থাকা একজন যুগ্মসচিব বলেন, আমাদের সফরের সঙ্গে সরকারি অর্থের কোনো সম্পর্ক নেই। বিদেশিরা আমাদের টিকিট করে দিয়েছে। সফরসংক্রান্ত খরচ বিদেশে পৌঁছার পর আমাদের দেওয়া হবে। তাই বাংলাদেশ থেকে ডলার নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশ সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আগে থেকেই বিরক্ত ছিলেন। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকে সরকারপ্রধানের কাছে যাওয়া ১০০টি ফাইলের মধ্যে কম-বেশি ৮০টিই বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে। এরই মধ্যে একাধিক মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সচিবের বিদেশ সফরের ফাইল ফেরত দিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে বার্তাও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও অর্থবছরের শেষদিকে বিদেশ সফরের হিড়িক ঠেকানো যাচ্ছিল না।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি মেলায় শতাধিক কর্মকর্তার বিদেশ সফর, কাতার রোড শোতে পৌনে দুইশ জনের আয়োজন। এসব ক্ষেত্রে স্ত্রী, আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো গণমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ ফাঁকফোকর খোঁজে, তাহলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0121910572052