বিদ্যালয়ে ক্লাস নিচ্ছেন দপ্তরি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, গাজীপুর |

গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের আঙ্গুটিয়াচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরিকে দিয়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই এর মধ্যে তাদের সন্তানদের নিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছেন।

সরেজমিনে বোরবার সকালে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দপ্তরি মো. সুমন হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলে দুই শিফটে ক্লাস হয়। প্রতি শিফটে একসঙ্গে তিনটি করে ক্লাস হয়। স্কুলে বর্তমানে চারজন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষকসহ দুইজনই প্রশিক্ষণে আছেন। প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া ঈদের বন্ধের আগে ১৩ জুন থেকে গাজীপুরের চাপুলিয়া এলাকায় লিডারশিপ ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। তার ট্রেনিং চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। সহকারী শিক্ষক নিগার সুলতানাকে এ বছরের ১ জুলাই থেকে গাজীপুর শহরের প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১০ মাসের (বিটিপিটি) ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়েছে। 

এতে স্কুলে থাকা দুইজন শিক্ষকের পক্ষে একই সঙ্গে তিনটি ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু এখনই নয়, বছরের অধিকাংশ সময় শিক্ষকের এমন সংকট থাকে। তখনই দপ্তরি সুমন ক্লাস নিয়ে নেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নির্দেশেই তিনি ক্লাসে যান।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবা আক্তার বলেন, তাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচজন শিক্ষকের পদ রয়েছেন। বর্তমানে সেখানে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া এবং সহকারী শিক্ষক নিগার সুলতানা প্রশিক্ষণে আছেন। এ অবস্থায় সহকারী শিক্ষক হাবিবা আক্তার ও ফরিদা ইয়াছমিনকে প্রথম শিফটে ও দ্বিতীয় শিফটের ছয়টি ক্লাস নিতে হচ্ছে। একই শিফটে একসঙ্গে তিনটি করে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। কোনো কোনো সময় শিশু শ্রেণির ক্লাসটি অর্ধেক সময় নিয়ে বাকি সময়ে অন্য দুই ক্লাস নিতে হয়।”

তবে দুই শিক্ষকের পক্ষে একই সঙ্গে তিনটি ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না বলে অনেক সময় দপ্তরি সুমন ক্লাস নিয়ে থাকেন বলে জানান এই শিক্ষিকা।

স্কুলের সভাপতি মাজহারুল হক বলেন, “শিক্ষক সংকটের মধ্যে দুইজন শিক্ষক একত্রে স্কুলের বাইরে কীভাবে প্রশিক্ষণে যান? শিক্ষা অফিস কীভাবে তাদের ট্রেনিংয়ের অনুমতি দিলেন, এটা আমার বোধগম্য নয়। এ ছাড়া বছরের অন্য সময়েও নিয়মিত সব ক্লাস হয় না।

“অভিভাবকরা এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পরে অনেকেই তাদের সন্তানদের এ স্কুল থেকে অন্যত্র নিয়ে ভর্তি করাচ্ছেন। আমার জানা মতে, সম্প্রতি দ্বিতীয় শ্রেণির প্রথম সুমাইয়া, চতুর্থ শ্রেণির ফারিয়া ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইসরাতসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে চলে গেছে। বর্তমানে এ স্কুলে ১৩০ শিক্ষার্থী রয়েছে।”

প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়া বলেন, “স্কুলে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে সামনে শিক্ষক নিয়োগের পর এ সংকট থাকবে না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে আমাদের শিক্ষক সংকটের কথা জানানো হয়েছে।

“শিক্ষক নিয়োগে দেরি হলে ডেপুটেশনে আমাদের শিক্ষক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।”

তিনি বলেন, “তবে আমি দপ্তরিকে ক্লাস নেওয়ার কোনো অনুমতি দেইনি। যদি কেউ অনুমতির কথা বলে থাকে তা হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দিলারা রহমান বলেন, “মির্জাপুর ক্লাস্টারে শিক্ষক সংকটের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত শিক্ষক নিয়োগের ভাইভা শেষ হলে শূন্যস্থান পূরণ করা হবে।”

দপ্তরিকে দিয়ে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “শিক্ষক সংকটের কারণে হয়ত দপ্তরিকে দিয়ে ঠেকার কাজ চালাচ্ছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029020309448242