বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর সংখ্যা নিয়ে অধিদপ্তর-এনজিও টানাটানি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশে বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর প্রকৃত সংখ্যা কত- এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যই নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর কাছে। আর এ সুযোগে একটা জরিপ করে ব্রাকসহ বিভিন্নএনজিও একটা সংখ্যা প্রচার করছে। ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে ব্রাক, গণসাক্ষরতা অভিযান, প্লান ইন্ট্যারন্যাশনালসহ অনেকের রয়েছে ব্যবসা। আবার টাকার বিনিময়ে এনজিওকে সাক্ষরতার কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।  

সম্প্রতি একটি বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও বলেছেন, বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের তথ্যে গরমিল রয়েছে। আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচি থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা না থাকায় এর সুবিধা পাচ্ছে না বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুরা। এই শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করে তাদের মূলধারার শিক্ষায় নিয়ে আসার সুপারিশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। 

বৈঠকে কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পিইডিপি-৪-এর সাব-কমপোনেন্টের আওতায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আট থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করার কথা। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ কর্মসূচির মাধ্যমে ১ লাখ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুর জন্য চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কারণ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে দেশে বিদ্যালয়বহির্ভূত শিক্ষার্থীর কোনো তালিকাই নেই। দেশের বিদ্যালয়বহির্ভূত প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিয়ে ধোঁঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানান, এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বৈঠকসূত্র জানান, বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুর তালিকা না করে আউট অব স্কুল চিলড্রেন কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকে। কেস টু কেস ভিত্তিতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করে সারা দেশে কাজ শুরুর পরামর্শ দেন উপস্থিতরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্য সদস্যরাও কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। কমিটির সদস্য বেগম মেহের আফরোজ বলেন, করোনাকালে অতীতের তুলনায় শিশুরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বেশি ঝরে পড়ছে। মূলধারা থেকে ছিটকে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনতে এ কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হলে এর সঙ্গে যুক্ত সবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হবে। এ প্রকল্পের কাজ সারা দেশে চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বাবু বৈঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস শুরু হলেও ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ কর্মসূচির আওতায় বিদ্যালয়বহির্ভূত যেসব শিক্ষার্থী মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে তাদের ক্লাস এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। অথচ এই শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষার মূলধারায় সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। স্কুলে না যাওয়া শিশুদের  ডাটাবেজ তৈরি করে দ্রুততার সঙ্গে কর্মসূচিভুক্ত সব এলাকায় ক্লাস শুরুর পরামর্শ দেন তিনি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয়বহির্ভূত আট থেকে ১৪ বছর বয়সী ২১ লাখ ঝরে পড়া শিশুকে মূলধারায় আনতে কর্মসূচিটি গ্রহণ করা হয়। তবে বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই-বাছাই করার সময় তথ্যের গরমিল ধরা পড়ে। সমস্যা সমাধান করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কাজ করছে। দ্রুতই এ তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক আতাউর রহমানের কাছে বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীর তালিকা নেই। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062448978424072