বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেন আওয়ামী লীগ নেতা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

দৈনিকশিক্ষাডটকম, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এডিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশে জনপ্রতি ৩ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে চারজনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া পরীক্ষার ফির নামে সরকার নির্ধারিত অর্থের প্রায় দ্বিগুণ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেছে স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী। আর এসব অতিরিক্ত টাকা স্কুলের ফান্ডে জমা না দিয়ে তারা নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার তাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এটি। গ্রামের বেশিরভাগ অভিভাবক নিজেদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য এই স্কুলে পাঠান। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছে চক্রটি। আর এই চক্রে রয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুর রহমান তমিজি এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিক।

জানা গেছে, সম্প্রতি চারটি পদের বিপরীতে আয়া, ঝাড়ুদার, নৈশপ্রহরীসহ স্কুলে চারজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম না মেনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিকের সুপারিশে এই নিয়োগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩ লাখ থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তারা।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। নিয়োগের সঙ্গে কি আপনার সম্পর্ক নেই—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সম্পর্ক থাকবে না কেন? আমি হেডমাস্টার, আমি নিয়োগ দিয়েছি, সম্পর্ক তো থাকবেই। আমি প্রথমে নিয়োগ দিয়েছিলাম। সেটা মানেননি স্থানীয় চেয়ারম্যান। পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিককে দায়িত্ব দেন চেয়ারম্যান। তিনি নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগের প্রক্রিয়া উনি করেছেন। এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। আপনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনার স্কুলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কীভাবে নিয়োগ দেন—এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমার দায়িত্ব থাকলেও আমি সেটা পরি নাই। আমার ওখানে কোনো ক্ষমতা নাই, ওখানে আমার কথার কোনো ভ্যালু নাই।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী স্কুলের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির যে কোনো সদস্য সুপারিশ করতে পারেন। ম্যানেজিং কমিটির বাইরে কারও সুপারিশ করার সুযোগ নেই। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিক কিংবা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুল কাদের শিকদার কেউ-ই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নন। সে ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ করার কোনো সুযোগ নেই। আর এই স্কুলে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিকের সুপারিশে চারজনকে নিয়োগ দিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, যা পুরোপুরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধিবহির্ভূত।

জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মল্লিক বলেন, ‘নিয়োগ নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল। তখন স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদার আমাকে নিয়োগের বিষয়টি দেখতে বলেন। তার নির্দেশনা অনুসারে আমি শুধু সুপারিশ করেছি। বাকি সব প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেখেছেন। আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি কারও কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নিইনি।

এদিকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় আজগানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের শিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে দায়িত্ব দেইনি। ওই স্কুলের নিয়োগ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তখন তারা আমাকে ডেকেছে। সেখানে প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, অভিভাবক সদস্য ও গণ্যমাণ্য আরও ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। আমি সেখানে বলেছি, সরকারি বিধি অনুযায়ী স্বচ্ছভাবে মেধাবীদের নিয়োগ দেবেন। এখানে যেন কোনো দুর্নীতি না হয়। এরপর তারা কী করেছেন তা আর আমি জানি না।’

স্কুলের এক অফিস সহকারী বলেন, এসএসসির রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু এই স্কুলে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এসব টাকা তারা স্কুলের ফান্ডে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।’

আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত একাধিক ভিডিও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। এসব ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয়রা স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে জিঙ্ঘাসাবাদ করছেন। ভিডিওতে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। আরও কয়েকটি ভিডিওতে স্থানীয় লোকজন প্রধান শিক্ষক ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জেরা করতে দেখা যায়। কয়েকটি ভিডিওতে নেওয়া টাকা ব্যাংক থেকে তুলতেও দেখা গেছে।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইদুর রহমান তমিজি বলেন, ‘এই ধরনের অভিযোগ মিথ্যা। আমরা কারও কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সবার সাক্ষাৎকার নিয়ে। আর স্কুলের নিয়মানুযায়ী টাকা নেওয়া হয়েছে। আশপাশের স্কুলের থেকে আমরা আরও কম টাকা নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশনের সময় শিক্ষার্থীদের তিন মাসের কোচিং ফির ২ হাজার ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052790641784668