মানিকগঞ্জের সিংগাইরে শিক্ষক নিয়োগ বিধি অমান্য করে এমপিওভুক্ত একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক ও কর্মী পদে কয়েকজনকে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জামশা ইউনিয়নের বশির উদ্দিন ফাউন্ডেশন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে শিক্ষক পদে ৩ জন এবং নাইটগার্ড ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া একইভাবে আরও ৪ জনকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতির চাপের মুখে সেটা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে নিয়োগের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান ৩ শিক্ষক নিয়োগের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক রেজাউল করিম, সন্ধ্যা রানী ও আঁখি দাস খুশি হয়ে আমাকে দেড় লাখ টাকা দিয়েছেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাকি টাকা তারা নিজেরাই খরচ করেছেন। আমি শুধু রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি।’ এই নিয়োগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোনো রেজুলেশন করা হয়নি বলেও জানান তিনি। এছাড়া বিষয়টি সামাল দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার নাম উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্য অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান গত সেপ্টেম্বরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই ৩ জনকে নিয়োগ দেন। এছাড়া মিজানুর রহমানকে নাইটগার্ড এবং রিনা আক্তারকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে হাতিয়ে নেন ৩৫ লাখ টাকা। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই শিক্ষক-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে না আসার নির্দেশ দেন। যে কারণে তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান তাদের নিয়োগ ‘বৈধ’ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এর আগে বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। প্রায় ৮ বছর ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ তার।
বিধি ভেঙে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন থাকলেও নিয়োগ নেই। প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।’
সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার স্বামীই সবকিছু জানেন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন পাওয়ার পর এখন পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
এই পাঁচজনকে নিয়োগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আরিফুর রহমান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ভিপি শহিদ ভাই আপনাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান শহিদ বলেন, ‘গত দেড় বছরের মধ্যে উনার সঙ্গে (আরিফুর রহমান) আমার কোনো কথাবার্তা হয়নি। অনিয়ম করে থাকলে তার যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত।’
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৩ শিক্ষকসহ ২ কর্মচারী নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। প্রধান শিক্ষক কীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন সে বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওই শিক্ষক-কর্মচারীদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনা পারভীন বলেন, ‘ওই শিক্ষকদের ফাইল আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। আমি ফেরত দিয়েছি। তারপর কীভাবে নিয়োগ হয়েছে আমি জানি না। বিষয়টি আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।’