২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে এসএসসি পাস করেন সুমাইয়া আক্তার। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজ থেকে একই বিভাগে এইচএসসি পাসের পর ওই কলেজে ডিগ্রি (পাস) ভর্তি হন। এখন পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। অথচ চলতি বছরের শুরুতে সুমাইয়া চাতলপাড় ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। এলাকাবাসী জানায়, ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য সুমাইয়াকে নতুন করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন তাঁর বাবা লুধু ভূঁইয়া। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় আলোড়ন তৈরি হয়।
জানা গেছে, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাধারণ অভিভাবক সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য ২৪ জুন তপশিল ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ে মোট বৈধ ভোটার ১ হাজার ৩৯৪ জন। ২২ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এতে অংশ নিচ্ছেন ১১ প্রার্থী। ওই তালিকায় আছে লুধু ভূঁইয়ার নাম। তাঁর পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য হাজেরা বেগম নামের আরেক প্রার্থী তাঁর কাতারপ্রবাসী ছেলে দরবেশ ভূঁইয়াকেও চলতি বছর বিদ্যালয়টির কারিগরি শাখায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের রেজিস্টার খাতায় দেখা গেছে, ভর্তির পর থেকে কেউই ক্লাসে অংশ নেননি। অথচ বিদ্যালয়ে তাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে দেখানো হয়েছে। শিক্ষকরাও তাদের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করেন। জানা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দেও ওই বিদ্যালয়ের নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন হাজেরা বেগম। সে জন্য ওই বছরও দরবেশ ভূঁইয়াকে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন ওই বছরের নির্বাচন বাতিল করে। পরে দরবেশ কাতার চলে যান। চলতি বছর দেশে ফিরে আবার ভর্তি হন।
এ দু’জনের অভিভাবকের সদস্য পদে নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস শহিদ নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজহারুল হক ভূঁইয়ার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি তাদের প্রার্থিতা বাতিলের আহ্বান জানান।
লুধু ভূঁইয়া ও হাজেরা বেগম– দু’জনের বাড়িই চাতলপাড় গ্রামে। বক্তব্য জানতে লুধু ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে দফায় দফায় কল দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি। হাজেরা বেগমের নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। তাদের কাউকে বৃহস্পতিবার বাড়িতেও পাওয়া যায়নি। পরিবারের সদস্যরা দরজা বন্ধ করে দেন। তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অঞ্জন কুমার বিশ্বাসের দাবি, দুই শিক্ষার্থীর ভর্তিতে অনিয়মের বিষয়ে কিছুই জানেন না। সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব খানই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। দু’জনের ভর্তিতেই নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
মো. আইয়ুব খানও মোবাইল ফোনে দাবি করেন, ‘তাদের ভর্তির বিষয়ে আমি জানি না। ভর্তির বিষয়টা অন্য শিক্ষক দেখভাল করেন।’ তিনি পরে ফোনে কথা বলবেন জানিয়ে সংযোগ কেটে দেন।
চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমর আলী বলেন, সুমাইয়া তাঁর কলেজে তৃতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্রী। তার বাবা লুধু ভূঁইয়া চাতলপাড় ডিগ্রি কলেজের অভিভাবক সদস্য পদে দুই দফায় নির্বাচন করেছেন। একবার ৪-৫ ভোটে হেরে যান। পরের বার সমঝোতায় প্রার্থিতা তুলে নেন। কীভাবে বিদ্যালয়ের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তা জানেন না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আজহারুল হক ভূঁইয়ার চোখে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের এমন কাণ্ড ন্যক্কারজনক। তিনি সদস্য নির্বাচিত হতে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করায় তাদের মনোনয়ন বাতিলের আশ্বাস দেন। এমনকি এতে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিললে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
ইউএনও মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া বলেন, ডিগ্রির ছাত্রী ও প্রবাসে থাকার ব্যক্তির নবম শ্রেণিতে ভর্তির বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই প্রার্থীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হবে।