বিধি ভেঙে সরকারিকৃত কলেজের অধ্যক্ষের ভার, ডেপুটেশনে নিয়োগের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারিকৃত চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা কলেজে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার কলেজের তহবিল তছরূপ এবং কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে চাঁদা আদায় করছেন।

কলেজ সরকারিকরণের ঠিকআগে চারজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে বাদ দিয়ে তৎকালীন গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করে অধ্যক্ষ পদের ভার বাগিয়েছেন মো. গোলাম ছরোয়ার। তিনি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক হলেও পরিচালনা করছেন ডিগ্রি কলেজ। টানা তিনবছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতা আকড়ে ধরে কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে সেখানে দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে। তাই, কলেজে ডেপুটেশনে একজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। যদিও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

জানা গেছে, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট কলেজটি সরকারি ঘোষণা করা হয়। ঠিক তার কয়েকমাস আগে সে বছরের জানুয়ারিতে কলেজের তৎকালীন গভর্ণিং বডি মো. গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়। কলেজ সরকারি হওয়ার পরই আত্তীকরণসহ নানা অজুহাতে সহকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা বলছেন, চারজন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙিয়ে মো. গোলাম ছরোয়ারকে এ পদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে তৎকালীন গভর্নিং বডি তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। মো.গোলাম ছরোয়ারকে অধ্যক্ষের ভার দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।

কলেজের এমপিও শিট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জ্যেষ্ঠতার দিক দিয়ে আবু সৈয়দ মো. আল মামুন রেজা,মো.আলম হোসেন, মোহা.আব্দুল মোনায়েম ও শেখ শফিউজ্জামানের পরের অবস্থানে আছেন মো. গোলাম ছরোয়ার। তিনি কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত। শিক্ষকরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোন ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে হলে সেই শিক্ষকের বিষয়টি ডিগ্রি পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু কৃষি শিক্ষা বিষয়টি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের।

শিক্ষকদের অভিযোগ,রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে নিয়োগের ফলে ধরাকে সরা জ্ঞান করে মো. গোলাম ছরোয়ার ভুয়া বিল-ভাউচার করে দুহাতে অর্থ উপার্জন করছেন। তার দায়িত্বপালনকালে ঐতিহ্যবাহী কলেজটির শিক্ষার মান তলানীতে ঠেকেছে। তাই,অবিলম্বে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে কলেজটির শিক্ষার মানোন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।

অভিযোগ রয়েছে, গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার দাপটের সঙ্গে একের পর এক দুর্নীতি অনিয়ম করে আসায় কলেজটির বাকি শিক্ষক-কর্মচারীরা অনেকটা অসহায় হয়ে তা দেখে আসছেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পান। কিন্ত, তারপরও এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ হয়নি। 

শিক্ষকরা বলছেন, সরকারিকৃত কলেজের যেগুলোতে নিয়মিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নেই, সেখানে সরকারি কলেজ থেকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হলেও তিন বছরেও আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে তা করা হয়নি। অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে কলেজ পরিচালিত হওয়ায় সেখানে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে চরমভাবে। নিজের ইচ্ছেমত খরচ করে কলেজের তহবিল তছরূপ এবং কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপলক্ষ দেখিয়ে চাঁদা আদায় নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।কোনো শিক্ষক তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলে এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ চিহ্নিত গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে তাদেরকে হুমকি-ধমকি করে থাকেন। মাঝে মধ্যেই তিনি বিতর্কিত লোকজন নিয়ে কলেজ চত্বরে খানাপিনা ও রাত্রিযাপন করে থাকেন। 

কলেজে কর্মরত একজন জুনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'শিক্ষকদের কাছ থেকে সরকরিকরণের কথা বলে জোরর্পূবক চাঁদা নিয়ে আলমডাঙ্গা শহরে দুইতলা ভবন নির্মান করে ভাড়া দিয়েছে এবং তার গ্রামের বাড়িতে বড় বড় পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। কলেজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে তহবিল থেকে টাকা খরচের নিয়ম থাকলেও তা তিনি মানেন না। তাছাড়া, কলেজের বিভিন্ন কর্মসূচির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা পকেটস্থ করেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি গত বছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে অংশ নেন।'

১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীর এ কলেজটিকে রক্ষায় গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ডেপুটেশনে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং গোলাম ছরোয়ারের কর্মকালীন সময়ে আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক একাধিক সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়,অধিদপ্তর ও দুদকে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার। অভিযোগের বিষয়ে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'আমি নিয়মমাফিক দায়িত্ব পেয়েছি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মাননীয় সংসদ সদস্য আমাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। যত অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক।

তিনি আরও বলেন, 'যে চারজন সিনিয়র শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে তাদের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান একটি অডিটে কিছু আপত্তি পাওয়া গিয়েছিল। পরে, তৎকালীন গভর্নিং বডির সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব দেয়া হবে না। তাই এমপি মহোদয় আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।'

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্ব থাকতে পারে কিনা জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052430629730225