দৈনিক শিক্ষাডটকম, সিলেট: সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে রেজিস্ট্রারসহ তিনটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক গত বৃহস্পতিবার এই নোটিশ দেন। নোটিশদাতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব, ভারপ্রাপ্ত) শমসের রাসেল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জুয়েল ও সহকারী কলেজ পরিদর্শক মাইদুল ইসলাম চৌধুরী।
নোটিশে বলা হয়, বিএসএফএমএমইউয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন গত ২৩ মে রেজিস্ট্রার, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এর আগে ২০২২ সালের ১ জুন অনুরূপ একটি বিজ্ঞপ্তি দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোরশেদ আহমেদ চৌধুরী। তখন আবেদনের ভিত্তিতে ১২ জুন আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) পদে নিয়োগ পান। ওই সময় তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ৪ জুলাই তিনি তৎকালীন উপাচার্যকে যোগদানপত্র দিলে গৃহীত হয়। যদিও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদিত বিএসএফএমএমইউয়ের অর্গানোগ্রামে ‘রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)’ পদই নেই। বিএসএফএমএমইউ আইন উপাচার্যকে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে একজন রেজিস্ট্রার নিয়োগের ক্ষমতা দেয়। এই ধরনের অস্থায়ী নিয়োগ আরও ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে; তবে সেটি সিন্ডিকেটের পূর্ব অনুমোদন সাপেক্ষে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ইউজিসি শুরুতেই বিএসএফএমএমইউয়ের জন্য ১১২টি পদের একটি অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করে। ওই তালিকায় রেজিস্ট্রারের একটি পদ রয়েছে। অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের কোনো পদ নেই। ফজলুর রহমান যখন ‘রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)’ পদে নিযুক্ত হন, তখন তিনি সিকৃবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী তিনি শুধু অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (সিকৃবিতে যে পদে ছিলেন) হিসেবে যোগদান করতে পারতেন। ২০২২ সালের ২৯ জুন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লিয়েন নীতিমালা অনুযায়ী সিকৃবি তাঁর ২ বছরের ছুটি অনুমোদন করে; যেখানে বিএসএফএমএমইউতে তাঁর নিয়োগ ছিল মাত্র ছয় মাসের। তাঁকে ‘রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)’ হিসেবে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তৎকালীন ভিসি মোর্শেদ আহমেদ ওই বছরের ১৯ নভেম্বর অবসর নেওয়ার আগে ফজলুর রহমানের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস আগেই একটি এক্সটেনশন দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার অনিক বলেন, ‘তাঁদের ইউজিসি থেকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে, তাঁরা কোনো পদেই যেন অস্থায়ী ভিত্তিতে বা অ্যাডহক ভিত্তিতে যেন কাউকেই চাকরি না দেন। তা সত্ত্বেও তাঁরা রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য পদে গত দুই বছর ধরে একটার পর একটা নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর কোনোটাই মানছেন না। এটা অমান্য করে আবারও নতুন করে একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। সেটার ব্যাপারে বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা এটা মানেন। যদি না মানে, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে বিএসএফএমএমইউয়ের উপাচার্য এনায়েত হোসেন আইনি নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘সত্য-মিথ্যা বলতে পারব না। আইনি নোটিশ আইনিভাবে মোকাবিলা করা হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন আছে।’
এদিকে বিএসএফএমএমইউয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের পর ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪২ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় বেশ বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। তবে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার।