বিমানে চড়ানোর পর মাকে বাড়ি উপহার দিলেন সেই শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মাকে বাড়ি উপহার দিয়েছেন সেই শিক্ষক শিপন রায় ও তার ভাই রতন রায়। এর আগে শিক্ষকতা শুরুর পরই মা গীরু বালা রায়কে বিমানে চড়িয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করেছিলেন শিক্ষক শিপন। এবার ভালোবাসা দিবসে দুই ভাই মাকে উপহার দিলেন স্বপ্নে বাড়ি ‘মায়ের স্বর্গ’। 

গতকাল সোমবার মধ্যরাতে ভালোবাসা দিবসের ঠিক আগ মুহুর্তে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ খুশির খবর দেন শিপন রায় নিজেই। পাঠান মাকে দেয়া উপহার মায়ের স্বর্গের ছবি।

শিপন রায়  রাজধানীর টিকাটুলী কামরুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের শেষে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছিলেন তিনি। এরপরই মায়ের স্বপ্ন পূরণে তিনি তাকে বিমানে চড়ান।

শিপন জানান, ফেনীর চরচান্দিয়া গ্রামের মেয়ে তার মা গীরু বালা রায়। জরাজীর্ণ ঘরে বহু কষ্টের জীবন ছিলো তার। বর্ষায় টিনের ফুটো গলে ঘরে পানি পড়ত। আর শীতে হু হু করে ঢুকত হিমেল বাতাস। ছেলেমেয়ে নিয়ে অনেক সময় না ঘুমিয়েই রাত পার করতে হতো। ৬২ বছর বয়সী মাকে তাই বাড়ি উপহার দিয়েছেন দুই ভাই। বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘মায়ের স্বর্গ’। নতুন বাড়িতে উঠেছেন তার মা। 

তিনি বলেন, আমার বাবা স্বপন রায় ও মাকে সারাজীবন ভাঙা টিনের ঘরে জীবন কাটাতে দেখেছি। এমনও রাত কাটাতে দেখেছি যখন আমরা ঘুমায় তখন মা সারারাত জেগে বড় বাটি নিয়ে ভাঙা টিনের ছাঁদ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ার সময় সে পানিগুলো মা ধরার চেষ্টা করেছেন যাতে আমরা ভিজে না যাই। শীতের সময়ে মা মাটির পাতিলে গরম ছাঁইয়ের তাপ দেয়ার চেষ্টা করতেন। ভাঙা ঘর হওয়ায় প্রচুর ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করতো। এসব স্মৃতি আমাকে অনেক অনেক কষ্ট দেয়। এছাড়া আমার মায়ের বয়স হয়েছে বলে বাকীটা জীবন যেন আরাম আয়াসে কাটাতে পারে সে জন্য করা। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান সময়ে যেভাবে বাবা-মায়ের ঠাঁই বৃদ্ধাশ্রমে হচ্ছে তা থেকে বের হয়ে বাবা-মায়ের সুখের জন্য এটুকু চেষ্টা করা।

যখন শুরু হলো বাড়ির কাজ :

শিক্ষক শিপন জানান, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতেই যখন আমি ননক্যাডার,সহকারী শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হই তখনই চিন্তা আসে এবার মায়ের জন্য ব্যতিক্রম কিছু করবো, যা মা কোনোদিন স্বপ্নেও দেখেনি। গত দুই বছর ধরে চাকরির পাশাপশি টিউশনি করে বাড়ির কাজ শুরু করলাম। বাড়িটির জন্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমার মেঝোভাই ও আমি যৌথভাবে বাড়িটা করেছি। আমি নিজের কিছু খরচসহ প্রায় ১২ লাখ টাকা ঋণ করলাম ঘরের কাজ বাবদ। জমি বন্ধক ও সুদে ঋণ নিয়ে বাড়িটি করেছি। আমার মেঝোভাই আগে ওমানে ছিলেন। বর্তমানে তিনি নরসুন্দরের কাজ করছেন। গত ১০ বছর ধরে জমানো ডিপিএস ভাঙিয়ে টাকার জোগান দিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনিও কিছু টাকা ঋণ করেন।

 

তিনি জানান, বাড়িটা তিনতলা ফাউন্ডেশনের একতলা বাড়ি। এটি মূলত একটা ডোবার সীমিত জায়গা ভরাট করে বাবা- চাচাদের রেখে যাওয়া ভিটেমাটিতে করা। আমার চাচাদের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতা করে এককভাবে বাড়িটা করেছি। চাচাদেরকে অন্য অংশে ততটুকু জায়গা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জায়গা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। সাত ফুট পর্যন্ত মাঠি ভরাট করে বাড়িটা করা হয়েছে।

শিক্ষক শিপন রায় বলেন, মায়ের জন্য বাড়িটা করতে গিয়ে গত দুই বছর ধরে পড়াশোনা করিনি। চাইলে আমি আরও তিনটি বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতাম। কিন্তু নিলাম না। কারণ আমার মায়ের জন্য কিছু একটা করার স্বপ্ন জেগে বসে। বড় কোনো পদে চাকরি করতে পারবো না এটা জানি কিন্তু আমার মায়ের কাছে, পৃথিবীর সব মায়ের কাছে ভালো সন্তান হিসেবে থাকতে হয়তো পারবো। তরুণ প্রজন্মকে প্রেরণা দিতেই এ কাজটি করেছি। 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন শিপন রায়। তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যাবেন বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042591094970703