বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস আজ শুক্রবার (৩১ মে)। এব ছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্রোটেক্টিং চিলড্রেন ফ্রম টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফেয়ারেন্স’। বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হতে যাচ্ছে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি’ শিরোনামে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় চার মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে, পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র তিন কোটি ৭৬ লাখ সাত হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের এক দশমিক তিন শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতিবছর এক লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক। তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে অতিরিক্ত যে লাভের কথা প্রচার করা হয়, তার প্রায় সবটাই বানোয়াট। আপাতদৃষ্টিতে তামাক চাষে বেশি আয় উপার্জন হলেও এই আয় থেকে পারিবারিক শ্রমের পারিতোষিক, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিজস্ব গাছের বা কাঠের দাম, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্য ব্যয় ইত্যাদি বাদ দিলে তামাক চাষে লাভের বদলে ক্ষতি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক চাষে নেট সোশ্যাল রিটার্ন ঋণাত্মক, প্রতি একরে ক্ষতি ৯১৬ দশমিক ১১ ডলার।
টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বন নিধনের পেছনে তামাক চাষ দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকানোর (কিউরিং) কাজে এক বছরেই প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অন্তত তিন কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী নিয়মিতভাবে তামাক ব্যবহার করে এবং যাদের নির্দিষ্ট ব্রান্ডে আসক্ত করতে কোম্পানিগুলো নানা ধরনের কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশের তামাকপণ্য সহজলভ্য করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেলিব্রেটিদের ব্যবহার করা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান এবং শক্তিশালী আইন ও কর পদক্ষেপের বিরোধিতা করা অন্যতম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোলের (সিডিসি) গবেষণায় দেখা গেছে, ২১ বছর বয়সের আগেই যারা তামাকে আসক্ত হয়ে পড়ে, তাদের মধ্যে নিকোটিন নির্ভরতা এবং আমৃত্যু তামাক ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
গ্লোবাল স্কুল-বেজড হেলথ সার্ভে, ২০১৪ (জিএসএইচএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘প্রজ্ঞা’র (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশই তরুণ-তরুণী এবং এরাই কোম্পানির মূল টার্গেট। আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে তামাক কোম্পানির ছোবল থেকে এই প্রজন্মকে সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।