বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বিক্ষিপ্ত ভাবনা

মো. রহমত উল্লাহ্ |

১. শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। মানুষ গড়ার কারিগর যত বেশি যোগ্য হবেন, সুদক্ষ হবেন, ততবেশি যোগ্য নাগরিক পাবো আমরা। তাইতো জীবনের সকল পরীক্ষায় অতি উত্তম ফলাফল অর্জনের পাশাপাশি একজন শিক্ষককে চলায়, বলায়, সাজে, পোশাকে, চিন্তায়, চেতনায়, জ্ঞানে, দক্ষতায়, মেধায়, নীতিতে, আদর্শে, দেশপ্রেমে, জাতীয়তাবোধে, আধুনিকতায় হতে হয় উত্তম। এসব বিবেচনায় যার উত্তম হওয়ার ইচ্ছা আছে, যোগ্যতা আছে, শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে নেওয়ার মানসিকতা আছে- তাকে বাছাই করার কাজটি আসলেই কঠিন। আমাদের দেশে শিক্ষক বাছাইয়ের প্রচলিত প্রক্রিয়া কতটা মানসম্মত তা ভেবে দেখা উচিত। বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বাছাই ক্ষমতা এনটিআরসিএ-এর হাতে নেওয়ার ফলে যোগ্য শিক্ষকরা নিয়োগ পাচ্ছেন সারাদেশে। তথাপি সেই মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এখনো কিছু কিছু বিষয়ে এমন অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ পাচ্ছেন যাদের সাধারণ জ্ঞান ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের গভীরতা ও প্রায়োগিক ক্ষমতা অত্যন্ত কম এবং তারা জানেন না ও পারেন না অনেক অনেক শব্দের সঠিক বানান ও উচ্চারণ! শ্রেণিকক্ষেও পরিহার করতে পারেন না আঞ্চলিক ভাষা! সঠিক পাঠদান তো অনেক দূরের কথা! প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিটি স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই আরও উন্নত করতে হবে শিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়া। সকল স্তরেই বৃদ্ধি করতে হবে শিক্ষক হওয়ার নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বাছাইয়ে মূল্যায়ন করতে হবে আরও অনেক বিষয়। তদুপরি শিক্ষক বাছাইকালে অবশ্যই প্রার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে হবে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে। যেন মূল্যায়ন করা যায় তাদের লেখার, বলার ও পাঠদানের দক্ষতা। চিহ্নিত করা যায় অযোগ্যতা বা দুর্বলতা।

২. আধুনিক বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানে শিক্ষককে থাকতে হয় সমৃদ্ধ। জানতে হয় আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সুফল-কুফল এবং সে আলোকে শিক্ষার্থীকে দিতে হয় সঠিক দিকনির্দেশনা। শিক্ষা লাভে শিক্ষককে সদা সর্বদা থাকতে হয় সক্রিয়। হতে হয় বই ও প্রকৃতির একনিষ্ঠ পাঠক এবং সেভাবেই গড়ে তুলতে হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক নিজে হতে হয় সবচেয়ে বড় শিক্ষার্থী। যিনি নিজে শিক্ষার্থী নন, তিনি অন্যের শিক্ষক হবেন কী করে? শিক্ষাদান শিক্ষকের একান্ত কর্তব্য। আর শিক্ষা গ্রহণ শিক্ষকের গুরুদায়িত্ব। শিক্ষাদানের পূর্বশর্তই শিক্ষা গ্রহণ। প্রতিনিয়ত শিক্ষাদান কার্যের পূর্বপ্রস্তুতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহণ। অবশ্যই থাকতে হবে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ। যে শিক্ষক ভাববেন, আমি কেবল পড়াব, পড়ব না; সে শিক্ষক কখনো ভালো শিক্ষক হবেন না। শিক্ষক নিজের মধ্যে শিক্ষার সঠিক চর্চা করেই সঠিক পরিচর্যা করবেন শিক্ষার্থীর। ভালো শিক্ষক নিজের মধ্যে জ্ঞানের চর্চা করবেন প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, আজীবন। নিরলসভাবে অর্জন ও বিতরণ করবেন নতুন নতুন জ্ঞান। শিক্ষার্থী ও সমাজের সব মানুষকে করবেন জ্ঞানে-গুণে সমৃদ্ধ। আলোকিত করবেন দেশ ও জাতি।

একজন ভালো শিক্ষক হবেন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। তার থাকবে নিজেকে উজাড় করে দেয়ার মতো মন-মানসিকতা। ভোগের চেয়ে ত্যাগের ইচ্ছাই থাকবে বেশি। তিনি কী পেলেন, তার চেয়ে বেশি ভাববেন কী দিলেন এবং কী দিতে পারলেন না। ভোগের চেয়ে ত্যাগেই বেশি আনন্দিত হবেন তিনি। বস্তু প্রাপ্তির নয়, জ্ঞান প্রাপ্তি ও প্রদানের সংগ্রামে অবতীর্ণ থাকবেন শিক্ষক। কেবল বস্তুগত প্রপ্তির আশায় যিনি শিক্ষক হবেন ও শিক্ষকতা করবেন তিনি কখনো প্রকৃত শিক্ষক হয়ে উঠবেন না। কেননা, প্রকৃত শিক্ষাদানের অন্তর্নিহিত অনাবিল আনন্দ ও শিক্ষাদানের অফুরান পুণ্য থেকে তিনি বঞ্চিতই থেকে যাবেন। শিক্ষকতার প্রকৃত পরিতৃপ্তি লাভের অতল সাগরে কোনোদিন যাওয়া হবে না তার। শিক্ষার্থীর জন্য যিনি নিবেদিতপ্রাণ তিনিই পরম শ্রদ্ধেয়। তাকেই শ্রদ্ধাভরে আজীবন মনে রাখে শিক্ষার্থী।

একজন ভালো শিক্ষক আজীবন লালন করবেন জানার এবং জানানোর ঐকান্তিক ইচ্ছা। শিক্ষককে জ্ঞানার্জনে হতে হবে নিরলস। অত্যন্ত সমৃদ্ধ হতে হবে নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানে। শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অত্যন্ত ভালোভাবে জানা থাকতে হবে শিক্ষার সজ্ঞা, শিক্ষার উদ্দেশ্য ও শিক্ষাদানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।

অত্যন্ত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হবেন শিক্ষক। তিনি হবেন সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল ও বাস্তববাদী। তার আয়ত্তে থাকবে শিক্ষাদানের মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান ও আধুনিক কলাকৌশল। একজন ভালো শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর মন-মানসিকতা, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, আগ্রহ-অনাগ্রহ বোঝার অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। নিজের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সবদিক থেকে প্রতিনিয়ত মূল্যায়ন করবেন শিক্ষক। সেই মূল্যায়নের আলোকেই দেখাবেন শিক্ষার্থীর সামনে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ। 

দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে পরিপূর্ণ হবেন শিক্ষক। ভালোভাবে জানবেন দেশ-জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। নিজের মধ্যে গভীরভাবে লালন ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনভাবে সঞ্চালন করবেন দেশপ্রেম ও জাতীয় চেতনা। দেশপ্রেমে ও জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত করবেন শিক্ষার্থীদের। 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষকের থাকতে হবে প্রাকৃতিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির একনিষ্ঠ ছাত্র হবেন শিক্ষক। থাকতে হবে প্রতিনিয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের ঐকান্তিক ইচ্ছা। নিজে শিখবেন এবং নিজের শিক্ষার্থীদের শিখাবেন প্রকৃতির পাঠ। সেই সঙ্গে শিখিয়ে দেবেন প্রকৃতির পাঠ রপ্ত করার কৌশল। শিক্ষার্থী যেন প্রকৃতিকে বানাতে পারে তার জীবনের নিত্য শিক্ষক। 

৩. যতই আধুনিক শিক্ষা উপকরণ যুক্ত করা হোক, উন্নত সুযোগসুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হোক; শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করা খুবই কঠিন কাজ বিশেষ করে আমাদের দেশে যেখানে সর্বোচ্চ মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেননি, আসছেন না যুগ যুগ ধরে। টাকা হলে রাতারাতি শিক্ষা উপকরণ বদল করা যায়, পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা যায়; কিন্তু শিক্ষকদের বদল বা মান বৃদ্ধি করা যায় না। শিক্ষকের মান বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। শিক্ষকের বেতন সর্বোচ্চ নির্ধারণ করে দেওয়ার সাথে সাথেই আমাদের সকল শিক্ষকের মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যাবে -এমনটি অবাস্তব। কেননা, এই আমি যতদিন আছি ততদিন দিয়েই যাবো ফাঁকি, রেখেই যাব কম দক্ষতার স্বাক্ষর। তথাপি বৃদ্ধি করতে হবে আমার তথা শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা। প্রশিক্ষিতদের দিতে হবে আরও বর্ধিত বেতন। শিক্ষকতায় আনতে হবে সর্বোচ্চ মেধাবী ও যোগ্যদের। কোনরকম কোটা সংরক্ষণ করে তুলনামূলক কম যোগ্যদের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ দেওয়া মোটেও উচিত নয়। কেননা, শিক্ষক অযোগ্য হলে জাতি অযোগ্য হয়। আমাদের সর্বাধিক মেধাবী ও যোগ্য সন্তানেরা যেদিন সাগ্রহে এসে দখল করবে আমাদের স্থান সেদিনই উন্নীত হবে আমাদের শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত মান। সেটি যতই সময়সাপেক্ষ হোক এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না কোন অজুহাতেই। ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিয়ে যথাসম্ভব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে আমার মত বিদ্যমান শিক্ষকদের মান। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শিক্ষক হওয়ার জন্য মাস্টার অফ টিচিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। তিনি যে পর্যায়ের, যে বিষয়ের শিক্ষকই হতে চান না কেন তার নিজস্ব বিষয়ে ডিগ্রির পাশাপাশি মাস্টার অফ টিচিং ডিগ্রি থাকতেই হবে। অর্থাৎ পাঠদানের বৈজ্ঞানিক কৌশল না জেনে কেউ শিক্ষক হতে পারেন না। অথচ আমাদের দেশে যে কেউ যে কোনো সময় শিক্ষক বা হুজুর হয়ে যাচ্ছেন! শিক্ষক হওয়ার জন্য শিক্ষকতা করার অর্থাৎ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও পাঠদানের আধুনিক কলাকৌশল আয়ত্ত করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই! তাই আমাদের বিদ্যমান শিক্ষক বা ওস্তাদদের যতটুকু সম্ভব প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানে। এর কোনো বিকল্প নেই বর্তমান বাস্তবতায়।

৪. আমাদের তুলনায় উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অনেক অনেক বেশি। হ্যাঁ, একথা অবশ্যই সঠিক, আমাদের দেশের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অত্যন্ত কম; যা বৃদ্ধি করা জরুরি। আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক-কর্মী তৈরি করার জন্য অবশ্যই বৃদ্ধি করতে হবে আমাদের শিক্ষার মান। শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্যই নিয়োগ করতে হবে সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক, বাড়াতে হবে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা। সেই সাথে করতে হবে বিদ্যমান সুবিধার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার। পর্যাপ্ত প্রার্থী থাকায় বর্তমান স্বল্প সুবিধার মধ্যেও শুরু করা সম্ভব আরও অধিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। সেজন্য পুনঃনির্ধারণ করতে হবে সর্বস্তরে শিক্ষক নিয়োগের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অগ্রাধিকার। শিক্ষকতার জন্য মূল বিষয়াদির পাশাপাশি শিক্ষায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করা হলে কয়েক বছর পরেই আর অভাব হবে না এই ডিগ্রিধারী প্রার্থীর। যারা শিক্ষক হতে চান তারা অনেক আগে থেকেই মনেপ্রাণে লালন করবেন শিক্ষকতা পেশাকে এবং যে বিষয়ের শিক্ষক হতে চান সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি অর্জন করবেন শিক্ষায় ব্যাচেলর ডিগ্রি। সবাই সব কাজের যোগ্য হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। মনে রাখতে হবে, অতি দুর্বলকে বারবার প্রশিক্ষণ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত করা সম্ভব হয় না। একজন অযোগ্য শিক্ষক সারাজীবনে তৈরি করেন অসংখ্য অযোগ্য নাগরিক-কর্মী। হয়তো সঠিক যোগ্যতার অভাবে নিজের অজান্তে, অনিচ্ছায় আমিও করছি তাই। শিক্ষক অযোগ্য হলে, সাধারণের অজান্তে সমাজের সর্বত্র তৈরি হয় গভীর ক্ষত, জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায় দেশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি! তাই অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা। কেননা, অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির জন্যই শিক্ষককে হতে হবে সর্বোচ্চ যোগ্য।

৫. আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে যতটুকু অগ্রগতি তথা অনুকূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ও হচ্ছে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন ও আছেন শিক্ষক সমাজ। অন্যথায় এই সফলতাটুকু অর্জন সম্ভব ছিল না মোটেও। আর এই শিক্ষকদের প্রায় ৯৭ ভাগ হচ্ছেন বেসরকারি। তাদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতায় সংসার চলে না, এটি এখন সবাই জানেন ও বোঝেন। শিক্ষকদের বাধ্য হয়েই বিকল্প উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে সংসারের ন্যূনতম ব্যয় মেটানোর জন্য। তাই তারা যোগ্যতানুসারে বেছে নিয়েছেন অতিরিক্ত কাজ করে সামান্য আয়ের পথ। কেউ কেউ প্রাইভেট পড়ানো, নোট-গাইড লেখা, বিভিন্ন ব্যবসা, ঠিকাদারি, রাজনীতি ইত্যাদি করছেন। আবার কেউ বাবার বা স্বামীর সম্পদ খাচ্ছেন। সেসব খাতের আয়ের ওপর যেহেতু তাদের জীবনধারণ অনেকাংশে নির্ভর করছে; সেহেতু তারা ঐ কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। ঐ কাজেই বেশি সময়, শ্রম ও মেধা খাটাচ্ছেন। ফলে শিক্ষকতায় তাদের মনোযোগ না থাকা বা কম থাকাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়াই বাস্তব। এই বাস্তবতায় প্রাইভেট না পড়ে বা কোচিং না করে শিক্ষার্থীরা পারবে কীভাবে? তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন; তাদের চেয়ে যারা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন বা কোচিং করাচ্ছেন তারা তো ব্যক্তিগতভাবে হলেও শিক্ষকতাই করছেন। নিজের পাঠদানের বিষয়টি নিয়মিত চর্চা করছেন কমবেশি। অন্যরা তো তাও করছেন না। এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেনি এবং শিক্ষকদের কাম্য বেতন-ভাতা নিশ্চিত করতে পারেনি বলেই হয়তো যুগ যুগ ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইভেট-কোচিং বন্ধের ব্যাপারে নমনীয় নীতি অনুসরণ ও নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে বার বার।

দীর্ঘদিনের এই দুরবস্থা থেকে শিক্ষার উত্তরণ ঘটাতে চাইলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও বাড়াতে হবে শিক্ষকদের প্রকৃত আর্থিক সুবিধা এবং সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে তাদের বাস্তবিক কর্মঘণ্টা। আর সেটি আন্তরিকভাবে মেনে নিতে হবে শিক্ষকদের। উন্নত বিশ্বের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ক্লাসেই দিয়ে থাকেন পরিপূর্ণ শিক্ষা। স্কুলের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় না ক্লাসের পড়া। 

মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমত নিশ্চিত করতে হবে মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয়ত শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা প্রদানের মাধ্যমে আরও বেশি সময় প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা। যেন শিক্ষকদের না থাকে বেতন-ভাতার অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের ধান্দা এবং শিক্ষার্থীদের না থাকে ক্লাসরুমের বাইরে ক্লাসের বিষয় পড়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা। 

লেখক :  মো. রহমত উল্লাহ্, অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028591156005859